এ ব্যাপারে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই যে উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ার পূর্ব দিকের প্রান্তীয় অঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনুমান করছে, এদের অনেকে শিগগিরই কুরস্ক অঞ্চলে যুদ্ধে যুক্ত হবে।
এই অনুমান যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটা রাশিয়ানদের ওপর উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কিম জন উনের শাসনকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কুরস্ক রাশিয়ার ভূখণ্ড। ইউক্রেনীয়রাই কুরস্কে আগ্রাসন চালিয়েছে। আমরা যেটা বুঝতে পারছি সেটা হলো, ইউক্রেনীয়রা প্রচুর লোকবল ও সরঞ্জাম হারিয়েছে এবং ধীরে ধীরে তাদের কুরস্কের গ্রামাঞ্চল থেকে পিছু হটতে হচ্ছে।
তিন হাজার কিংবা দশ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য তৈরি করতে পারবে না। রাশিয়ার একেকটি কমব্যাট ব্রিগেডে ৮ হাজারের মতো সেনা থাকে। ফলে উত্তর কোরিয়ার সেনা যুক্ত হলে রাশিয়ার এক ব্রিগেডের মতো শক্তি বাড়বে।
এখন পর্যন্ত খবরে জানা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা পদাতিক সেনা। তারা কোনো সাঁজোয়া যান কিংবা কোনো গোলাবারুদ নিয়ে যায়নি। রাশিয়ার যুদ্ধ কৌশল নিয়ে তাদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ থাকলেও তাদের বেশির ভাগই রুশ ভাষা জানে না।
উত্তর কোরিয়ানরা যদি রুশ ভূখণ্ডে সত্যিই কেউ যুদ্ধ করে থাকে তাহলে তারা ভাড়াটে সেনা। পশ্চিমারা সম্মিলিতভাবে ইউক্রেনকে ১৩ হাজার ভাড়াটে সেনা পাঠিয়েছে। এর বাইরেও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং জটিল যোগাযোগব্যবস্থা পরিচালনার জন্য অজানাসংখ্যক পোশাকধারী উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞও তারা পাঠিয়েছে।
রাশিয়ার আইনসভা ডুমা সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের যেকোনো একটি দেশ আক্রান্ত হলে পরস্পরকে রক্ষায় অন্য দেশ সহযোগিতা করবে।
কুরস্কে ইউক্রেনীয়দের আক্রমণ রাশিয়ার ভূখণ্ডে আগ্রাসনের শামিল বিবেচনা করে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যৌথ সামরিক চুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি নিয়ে কেউ ভালো করে জানে না। ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধ অবসানের পর দেশটি আর কোনো স্থলযুদ্ধে অংশ নেয়নি। যেকোনো দিক থেকে বিবেচনা করলে উত্তর কোরিয়ার পিপলস আর্মি অনভিজ্ঞ এবং তাদের কাছে আধুনিক সমরাস্ত্রের ঘাটতি আছে।
উত্তর কোরিয়ার কাছে অপ্রচলিত ট্যাংক আছে। কিন্তু রাশিয়ার কাছে সে ধরনের ট্যাংক নেই। উত্তর কোরিয়ার হাতে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ আছে, কিন্তু সেই গোলাবারুদ ব্যবহার করার উপযুক্ত অস্ত্র রাশিয়ার কাছে নেই। উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর যোগাযোগব্যবস্থা এবং কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া না গেলেও এটি নিশ্চিত যে সেটা সেকেলে। ফলে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী কীভাবে অনেক বেশি আধুনিক রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারবে, সেটা একটি খোলা প্রশ্ন।
এখন প্রশ্ন হলো, ইউক্রেনীয়রা কেন কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের যুদ্ধ করা না–করা নিয়ে এতটা উতলা হয়ে উঠল। এর কারণ খুব সরল। জেলেনস্কি ও তাঁর সেনাপ্রধান বুদানভ চান যে পশ্চিমারা সরাসরি ইউক্রেনে সেনা পাঠাক এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করুক।