হয়রানিমূলক মামলা কাম্য নয়

বিডি নিউজ ২৪ চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:০৮

“যারা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে”– গত ১৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এমনটাই বলেছিলেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছিলেন সেদিন। অথচ ঠিক এর পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া হলো। গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলামকে গুলি ও মারধরের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে জেড আই খান পান্নাসহ ১৮০ জনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় বিজিবির বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীকেও আসামি করা হয়েছে। অবশ্য ২১ অক্টোবর হত্যাচেষ্টার মামলা থেকে জেড আই খান পান্নার নাম বাদ দিতে আবেদন করেছেন মামলার বাদী মো. বাকের। আবেদনে বাদী তার মামলার এজাহারে জেড আই খান পান্নাকে ভুলবশত আসামি করেছেন উল্লেখ করে তার নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।


কেন জেডআই খান পান্নার মতো একজন প্রবীণ আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা মামলার আসামি করা হলো? উত্তরটা খুবই সহজ। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু নীতির বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা ভাষায় সমালোচনা করছেন। আবার তিনি বিভিন্ন অভিযোগে ঢালাও মামলা দায়েরেরও কঠোর সমালোচনা করছেন। তার এই ভূমিকার সুযোগ নিয়ে একান্তই ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য থেকে কেউ এই মামলায় তাকে আসামি বানানোর চেষ্টা করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। জেড আই খান পান্নার আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, “তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা তাকে হ্যারাস করার জন্যই করা হয়েছে। আমি মনে করি না এখানে রাষ্ট্র বা যারা ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত, তাদের কোনো প্রভাব আছে।”


আমাদের দেশে মিথ্যা মামলার ধারা অনেকদিন ধরেই চলছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আশা করা হয়েছিল যে, এবার হয়তো দেশে নতুন নিয়ম চালু হবে। আইন সত্য ও ন্যায়ের পথে চলবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পুরনো ধারাতেই চলছে অনেক কিছুই। একের পর হত্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসব মামলায় ঢালাওভাবে শত শত, এমনকি হাজার হাজার মানুষকে আসামি করা হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রী, মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মামলাতেই অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার আসামি করা হয়েছে। এগুলো দেখলেই বোঝা যায়, আসল ঘটনার সঙ্গে এসব মামলার খুব একটা যোগ নেই। কেবল হয়রানি আর ভীতি সৃষ্টির জন্যই এসব মামলা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও একইভাবে জ্ঞাত-অজ্ঞাত অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হতো। সেই ধারা এখনো চলছে। এর একটা কারণ হলো, অনেক লোককে আসামি করলে এক ধরনের ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি এর থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করা যায়। মামলা হলেই মানুষকে হয়রানি করা যায়। অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়া যায়। থানা ও আদলতসংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির মানুষ এই সুযোগটা গ্রহণ করে।



অথচ নাগরিকদের অধিকার রক্ষার করাই আইনের উদ্দেশ্য। কিন্তু আমাদের দেশে আইন পরিণত হয়েছে নিরীহ মানুষকে হয়রানির হাতিয়ারে। কোনো রকম বিচার-বিবেচনা না করে, তথ্যপ্রমাণের ধার না ধেরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্য নিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়, এখনও তাই দেওয়া হচ্ছে। এসব ঢালাও মামলা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ এবং সমালোচনা করা হলেও এই ধারা থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।


এর আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে হত্যা মামলা দায়েরের ব্যাপারে ইতিবাচক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও। কিন্তু বাস্তবে এসব আদেশ-নির্দেশ-অনুরোধ কাজে আসেনি। খেয়াল-খুশিমতো যার-তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে গড়ে ওঠা প্রবল আন্দোলন দমন করতে যে নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল, তার বিচার অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু বিচারের নামে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করার অধিকার কারও নেই। বরং এই সব মামলা ন্যায় বিচার পাওয়ার পথে প্রতিবঘ্নক হবে বলে ধারণা করা যায়।


এক ধরনের প্রতিশোধ ও খেয়ালের বশেই যেন আইন-আদালতের কার্যক্রম চলছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে বহু মামলা হয়েছে। কিন্তু এসব মামলায় শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, শিল্পী–সংস্কৃতিকর্মী, লেখক-সাংবাদিকদের নামও জুড়ে দেওয়া হয়েছে আগের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে। কোনো সরকারকে সমর্থন বা বিরোধিতা করা নাগরিকের একান্তই তার নিজস্ব বিষয়। এটা একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। দেখতে হবে তিনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়েছেন কিনা। যদি জড়িত হয়ে থাকেন, তথ্যপ্রমাণসহ তার বিরুদ্ধে মামলা হতে হবে। কেবল ফাঁসানোর জন্য বা প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে ঢালাও মামলায় জড়ানো কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সরকারের ভূমিকা হতে পারে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us