যে কায়দায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হলো

প্রথম আলো সৌমিত জয়দ্বীপ প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৩৩

মর্মান্তিক ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ পর অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থান ঘটলেও বিজয়োল্লাস খুব বেশি দীর্ঘ করা যায়নি। এটি যেকোনো ‘পাওয়ার শিফটিং’ বা রাজনৈতিক রূপান্তরের বৈশিষ্ট্য হলেও প্রত্যাশা ছিল, বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ‘অরাজনৈতিক’ আকাঙ্ক্ষার গণ–অভ্যুত্থানের পর ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। কিন্তু চাইলেই এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা অরাজনৈতিক রাখা যায় না এবং রাজনৈতিক হওয়াই যে তার অনিবার্য ভবিতব্য, সেটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ফলে শেষমেশ বিজয়োল্লাস ‘বিশৃঙ্খলা’য় রূপান্তরিত হয়েছে।


একটি বৈপ্লবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘অ্যানার্কি’ বা নৈরাজ্য ঘটা খুবই স্বাভাবিক প্রবণতা। ফরাসি বিপ্লবেও এমনটা ঘটেছিল। ১৯৭১ সালের মহাবিজয়ের পরও তেমনটি দেখা গিয়েছিল। আর বিপুল প্রত্যাঘাতের পর জয় এলে ‘কার্নিভ্যাল মোমেন্ট’ বা ‘উৎসব মুহূর্ত’ও পাগলপ্রায় হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু রাজনৈতিক বাইনারিকরণ সে মুহূর্তটাকেও খুব কম সময়ের মধ্যেই গ্রাস করে ফেলেছে। গত ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে সরকার পতনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেভাবে ভূপাতিত হয়েছে, তাকে শুধু নৈরাজ্য দিয়েও ব্যাখ্যা করা কঠিন।


কেন ভেঙে গেল এই ব্যবস্থাপনা


পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ‘ইনকামবেন্ট রেজিম’ বা ‘কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীন’ পাওয়া যাবে না, যারা মসনদে থাকলে প্রাত্যহিক নানা কারণেই জনগণের অন্তত একটা অংশ অসন্তুষ্ট হবেন না।


আর এই কর্তৃত্ববাদীর রাজদণ্ড যদি দীর্ঘদিন জোরপূর্বক জনগণের ওপর অগণতান্ত্রিক কায়দায় অসম আগ্রাসনে লিপ্ত হয়, স্বৈরাচারী হয়, নির্বিচার-বিনা বিচারে হত্যা-গুমে লিপ্ত হয়, তাহলে প্রত্যাঘাত শুধু অসন্তুষ্টি থেকে আসে না। সেই অসন্তুষ্টি যে কখন আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাতের মতো ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়/ বুক পেতেছি গুলি কর’ মানসিকতায় রূপ নিয়ে ফেলে, তা মসনদশাহিরা টের পান না; বরং তাঁরা মসনদের মোহে লাগাতার ভুল করতে থাকেন এবং টানা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে যেতে এতটাই ক্ষুব্ধ করে ফেলেন যে যাবতীয় দৃশ্যমান উন্নয়নের (অদৃশ্যে দুর্নীতিও আছে) ডঙ্কা একদিকে বাজতে থাকলেও, বিদায়ঘণ্টার বাজনা অপর দিকে দ্রুত বাজতে থাকে।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়, আমলাতন্ত্রনির্ভর রাষ্ট্রে সরকারের হৃৎপিণ্ড দুটি—স্থায়ী সরকার ও অস্থায়ী সরকার। স্থায়ী সরকারের অংশ আমলারা। অস্থায়ী সরকারের অংশ রাজনীতিকেরা। রাজনৈতিক নেতৃত্বই মূলত সরকারের সব নীতিমালার সিদ্ধান্ত নেন, আমলারা আদিষ্ট হয়ে নীতিমালা নির্বাহ ও প্রতিপালন করেন। অস্থায়ী সরকার যাবে-আসবে, স্থায়ী সরকার চলমান থাকবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অস্থায়ী সরকারের পতনের পর স্থায়ী সরকারের ব্যবস্থাপনা এমনভাবে ভেঙে গেল যে পুরো রাষ্ট্র বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে গেল; জনগণের বিজয়োল্লাস বাঁধনহারা হতে হতে জন–অন্তর্ঘাতে পরিণত হলো।



কেন ভেঙে গেল এ ব্যবস্থাপনা? ভেঙে গেল কারণ, পুরো রাষ্ট্রটি এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চালানো হয়েছে গত দেড় দশকে, যেখানে রাষ্ট্রের চেয়ে সরকার বড়, সরকারের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে নেতা বড়, নেতার চেয়ে সর্বোচ্চ পদাধিকারী বড় মনোভাব আধিপত্য দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের বেদনা হচ্ছে এই যে স্বাধীনতার পর থেকে যাঁরাই ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা এই নীতির বাইরে গিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেননি। সর্বশেষ রেজিমের কথা তো বলাই বাহুল্য! ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন ফিরে ফিরে আসে!


একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হীন ব্যক্তিস্বার্থ, পারিবারিক স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহারই শুধু করা হয়নি, এগুলোর মেরুদণ্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য রীতিমতো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জটিলতম সংকটের কালে এই প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ তুলে দাঁড়াতে তো পারেইনি, উল্টো যে অনুগতদের দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান এতদিন চালানো হয়েছে, তঁারাও মহামহিমের মতো হয় পাততাড়ি গুটিয়ে পালিয়েছেন, নতুবা স্বেচ্ছায় তারাদের মতো খসে পড়েছেন কিংবা অভ্যুত্থান-পরবর্তী লঘু প্রতিরোধেই ভড়কে গেছেন।


নির্বাচনী স্বৈরাচার ও মুখ থুবড়ে পড়া সব প্রতিষ্ঠান


বাংলাদেশে এত দিনের সংকট তৈরি হয়েছে ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) বনাম ডিক্টেটরের (স্বৈরাচার) যুযুধান লড়াইয়ে ডেমোক্রেসিকে ‘সিস্টেমেটিক ডিক্টেটরশিপ’ (প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরাচার) দ্বারা পরাজিত করিয়ে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মোটাদাগে যে চার ধরনের স্বৈরাচারের কথা বলে, তার একটি ‘সামরিক স্বৈরাচার’, যেটি ছিলেন আইয়ুব-এরশাদ।


‘রাজকীয় স্বৈরাচার’ ছাড়া বাকি দুটি—‘একদলীয় স্বৈরাচার’ ও ‘একব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচার’ গত রেজিমের সঙ্গে খুব মানানসই। কিন্তু গত রেজিম ‘প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরাচার’ নামের একটি নতুন প্রকৃতির জন্ম দিয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের তামাম প্রতিষ্ঠানকে ‘যথাযথ উপায়ে’ ব্যবহার করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে।


তথাকথিত ‘নির্বাচনী গণতন্ত্র’কে কবর দেওয়া হয়েছে আইনসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। সেটিও আবার ‘স্বাধীন’ বিচার বিভাগের দ্বারা আইনসিদ্ধ (লেজিটেমাইজ) করে এবং রায়কে মনগড়াভাবে সংসদে ব্যাখ্যা করে, যেন ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা যায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us