প্রতিদিন বিবাহ বিচ্ছেদের সংবাদ পাওয়া যায়। একটি সুখি-সমৃদ্ধ ও শান্তিময় পারিবারিক জীবনের প্রাথমিক শর্ত হলো বিবাহ। বিয়ে হচ্ছে একটি পবিত্র বন্ধন। এটা কারো অজানা নেই, একজন পুরুষ এবং একজন নারীর একত্রে জীবন যাপনে শরিয়ত মোতাবেক যে বন্ধন স্থাপিত হয়, তারই নাম বিবাহ।
বিয়ে-বন্ধন কেব লমাত্র গতানুগতিক বা কোন সামাজিক প্রথা নয়, এটা মানব জীবনের ইহকাল ও পরকালের মানবীয় পবিত্রতা রক্ষার জন্য আল্লাহপাকের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত। সুতরাং এটা যে কেবল মাত্র পার্থিব জীবনের গুরুত্বই বহন করে এমন নয়, বরং পারলৌকিক জীবনের জন্যও অনেক গুরুত্ব বহন করে। বিয়ের এই পবিত্র বন্ধনকে ছিন্ন করে সমাজে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা অহরহ ঘটছে। যদিও তালাকের বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা রয়েছে কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক কোনো পছন্দনীয় কাজ নয়। বরং ইসলামে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট হালাল কাজ হিসেবে তালাককে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে নারীকে করা হয়েছে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী ও অর্ধাঙ্গিনী। কারণ, পুরুষ নিজ জীবনে আপন ভবনে স্বয়ং সম্পূর্ণ নয় বলেই একজন সহযোগিনীর একান্ত মুখাপেক্ষী। নারীর অবর্তমানে পুরুষের হৃদয় শূন্য কোঠা সমতুল্য। একজন সুস্থসবল, সতীসাধ্বী, ধর্মপরায়ণা নারীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যমেই কেবল তার এ শূন্য কোঠা পূর্ণ হতে পারে। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক ও পরিপোষক।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মাঝে এ-ও হলো একটি নিদর্শন যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মাঝ থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা প্রশান্তি লাভের জন্য তাদের কাছে যাও এবং তিনি তোমাদের মাঝে প্রেম-প্রীতি ও দয়ামায়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে সেইসব লোকের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে, যারা চিন্তাভাবনা করে’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)।
নারী পুরুষের হৃদয়ে প্রশান্তি লাভের নির্ভরযোগ্য এক আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিবাহবন্ধন। কেবল মাত্র বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমেই কোন পুরুষ এ পবিত্র আশ্রয়স্থলে প্রবেশ করতে পারে। তাই বিবাহকে বলা হয় শান্তির প্রতীক।
বিবাহের এই অসাধারণ গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করেই মানব সৃষ্টির আদিতে বৈবাহিক যোগসূত্রের গোড়াপত্তন হয়। কারণ, এই সহ জীবন যাপনের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিবাহ বন্ধন। সকল দিক বিবেচনা করেই পবিত্র কুরআনে মানব সম্প্রদায়কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যুগল প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য তুমি বিবাহের চেয়ে উত্তম কিছুই খুঁজে পাবে না’ (ইবনে মাজা)। অথচ আজ সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে পবিত্র বন্ধন রচিত হয়েছে তা থেকে দূরে সরে যায়। ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা রাখলেও তালাক প্রদানে উৎসাহিত করা হয়নি।
বর্তমান বিচ্ছেদের প্রবণতা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মনে হয় এটা কোন বিষয়ই না। আমরা এটাও লক্ষ্য করিনা এর মাধ্যমে যে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা ও আদর্শকে ধ্বংস করে দিচ্ছি।