‘পইঠায় বসে ধোঁয়-ওঠা ভাত,
টাটকা ইলিশ-ভাজা-
ছোকানু রে, তুই আকাশের রানী,
আমি পদ্মার রাজা।’
পাঠক, মনে পড়ে বুদ্ধদেব বসুর ‘নদীর স্বপ্ন’ নামের সেই বিখ্যাত কবিতার চরণ ক’টি? কিশোর বয়সী দুই ভাই-বোন স্বপ্ন দেখে- ওদেরকে নদীভ্রমণে নিয়ে মাঝি দুপুরে টাটকা ইলিশ ভেজে খাওয়ান। সেই ইলিশের স্বাদ পেয়ে মনে মনে কিশোরটি হয়ে যায় পদ্মার রাজা; আর কিশোরীটি হয় আকাশের রানী। এমনিই রাজকীয় স্বাদ বাংলার ইলিশের। অথচ সেই ইলিশ সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে দাদনদারদের কারসাজিতে।
তিন পর্বের এই ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দ্বিতীয়টিতে আমরা দেখিয়েছি, সর্বগ্রাসী দাদন-ব্যবস্থা কেমন করে গোটা ইলিশ-বাণিজ্যকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। আমরা দেশে প্রচলিত মাছসংক্রান্ত আইনগুলো ঘেঁটে দেখেছি, এই দাদন প্রথা মোটেও আইনসম্মত নয়। আইনের দৃষ্টিতে দাদন অবৈধ। অথচ এই অবৈধ কারবারটিই মাছেভাতে বাঙালির দেশে চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। কেউ কখনো এই নিয়ে উচ্চবাচ্যও করেনি; প্রতিরোধের ব্যবস্থাও নেয়নি। যে কারণে মাছ–বাণিজ্যে দাদন প্রথা একটা ‘অলিখিত নিয়ম’-এ পরিণত হয়েছে।