প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট একটি নির্দিষ্ট খাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা হচ্ছে নদী, যার উৎপত্তি ও প্রবাহের ক্ষেত্র কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখায় নিয়ন্ত্রিত নয়। ফ্লুভিয়াল সিস্টেম অনুযায়ী নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত এর প্রবাহিত ধারা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত; প্রথম পর্যায় (জোন অব প্রডাকশন-পানি ও পলি সরবরাহের ঊর্ধ্ব অববাহিকা), দ্বিতীয় পর্যায় (জোন অব ট্রান্সপোর্টেশন- পানি ও পলি প্রবাহিত মধ্য অববাহিকা) এবং তৃতীয় পর্যায় (জোন অব ডিপোজিশন- পানি ও পলি সঞ্চয়ন নিম্ন অববাহিকা)। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় (জিবিএম বেসিন) প্রবাহিত অধিকাংশ নদীর তৃতীয় পর্যায়ে নিম্ন অববাহিকায় বাংলাদেশের অবস্থান।
নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে পানিপ্রবাহের প্রাপ্তির নায্যতা ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্ব এবং মধ্য অববাহিকার দেশগুলোর নদী ও পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনার নীতির ওপর নির্ভর করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, দানিয়ুব নদী ইউরোপের ১২টি দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে এ নদী ইউরোপের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে রয়েছে। অস্ট্রিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত বিস্তৃত এ নদীর তীরে গড়ে উঠেছে পাঁচটি রাজধানী শহর। আন্তর্জাতিক আইন মেনে কতটা অঙ্গীকার ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দানিয়ুব নদী ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে তা পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে শিক্ষণীয়। পৃথিবীতে প্রায় ২৬০টি অভিন্ন, দ্বিরাষ্ট্রীয় বা বহুরাষ্ট্রীয় নদী রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেই অভিন্ন নদী রয়েছে ৫৪টি। বিশ্বের অন্য কোনো অঞ্চলে দুটি দেশের মধ্যে এত বিপুলসংখ্যক নদী প্রবাহিত হওয়ার নজির নেই। এদিক থেকে বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগোলিকভাবে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থান করছে।