সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করার আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন এসে যায়। তাঁরা দাবি করছেন, মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা হতে পারে না।
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন, আদৌ কি আমাদের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ আছে? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি তরুণদের চাকরির বাজারের উপযোগী করে তৈরি করতে পারছে?
যাঁরা সবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ চাকরির আবেদনের বয়স বাড়াতে আগ্রহী নন। তাঁরা মনে করেন, অধিক বয়সী প্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে চাকরির পরীক্ষায় যথেষ্ট এগিয়ে থাকেন। তাই তাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন। অথচ গত কয়েকটি বিসিএস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রায় ৪০ শতাংশের বয়স ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। আর ২৭ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থী শতকরা ১৫ ভাগের মতো। এর মধ্যে ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থী মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। ফলে চাকরির বয়স বাড়ানো হলে ‘ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট’দের জন্য ক্ষতির কারণ হয়তো ঘটবে না। কিন্তু সমস্যা রয়ে যাচ্ছে অন্য জায়গায়।
যেমন চাকরির আবেদনের বয়স ৩৫ করা মানে এই নয় যে ওই বয়সেই তিনি চাকরি শুরু করবেন। আবেদন করার পরে বিপুলসংখ্যক আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য পিএসসিকে সময় নিতে হয়। এরপর প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। সব মিলিয়ে অন্তত দেড়-দুই বছর পার হয়ে যায়। এরপর আছে চূড়ান্ত নির্বাচিত প্রার্থীদের গোপন তথ্য যাচাই ও প্রশিক্ষণের কাজ। এর ফলে শেষ পর্যন্ত ৩৫ বছর বয়সী তরুণকে আসলে ৩৭ থেকে ৩৮ বছর বয়সে চাকরি শুরু করতে হবে। পর্যালোচনা কমিটিকে এটিও বিবেচনায় নিতে হবে।
আবার গড় আয়ু বেড়েছে বলে চাকরির বয়সও বাড়াতে হবে, এটা ভালো যুক্তি হতে পারে না। দেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশকে কেবল নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যস্ত রাখলে তা দেশের অর্থনীতি ও উৎপাদনের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। এটা ঠিক, পৃথিবীর অনেক দেশেই সিভিল সার্ভিসে যোগদানের ন্যূনতম বয়স ৩৫ বা তার বেশি। কিন্তু খেয়াল রাখা দরকার, সেখানে আবেদন করারও সীমা রয়েছে। সেটি ৫ থেকে ৭ বারের বেশি নয়। তা ছাড়া আমাদের মতো উচ্চ বেকারত্বের দেশে চাকরির ‘মুলা ঝুলিয়ে’ তরুণদের এভাবে বসিয়ে রেখে বেকারত্ব কমানোর আশা করা যায় না।
প্রশ্ন আরও আছে। বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস বা সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য তরুণদের মধ্যে এই দুর্দমনীয় আগ্রহ তৈরি হলো কেন? সহজ উত্তর— ক্ষমতা ও বিত্তের অধিকারী হয়ে ওঠার জন্য এর চেয়ে ‘শর্টকাট’ রাস্তা বুঝি আর নেই। ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি বা অন্য কোনো পেশাগত জায়গা থেকে পাস করা প্রার্থীদেরও তাই বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়।
পর্যালোচনা কমিটি পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষাগুলোকে নিয়মিত করার সুপারিশ করতে পারে। ইতিমধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কার হয়েছে। সেখানে মেধার সুযোগ অনেক বেড়েছে। এখন নিয়োগপ্রক্রিয়া অধিক স্বচ্ছ করার উপায় নিয়েও কাজ করা যায়। তবে সবকিছুর আগে দরকার প্রশ্নপদ্ধতির পরিবর্তন আনা। উন্নত দেশের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে ভাষিক যোগাযোগ, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত ক্ষমতা, সমস্যার সমাধান, দলগত কাজের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।