মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। ২ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে ইরানের ১৮০টি সুপারসনিক মিসাইল হামলার পর হিজবুল্লাহ ২ ঘণ্টার ব্যবধানে ২০০টিরও বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের একগুঁয়েমি মনোভাবের কারণ তার প্রতি মার্কিন ও ইউরোপীয় শক্তির সমর্থন। কিন্তু লেবাননে একটানা হামলা চালানোর পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন চেতনা জেগে উঠেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লেবাননে বেসামরিক মানুষের ওপর বোমাবর্ষণের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জেগে উঠে ঐক্য গড়ে তুলবে।
ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডসের পরামর্শে বিভিন্ন দেশের ছোট ছোট জোট একই নির্দেশনায় কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। ফিলিস্তিনের হামাস, ইরাক ও ইরানের শিয়া মিলিশিয়া, ইয়েমেনের হুথি, লেবাননের হিজবুল্লাহ-সবার লক্ষ্য এখন ইসরাইলের আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ার মাধ্যমে শত্রু দমন। সৌদি যুবরাজ সালমান এই প্রথম লেবাননের বেসামরিক মানুষের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর শতাধিকবার বোমাবর্ষণের প্রতিবাদ করেছেন। এদিকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরাইলের অভ্যন্তরে সাসা শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হুথি দাবি করেছে, তারা তেল আবিবেও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। শত্রুপক্ষ এসব ড্রোন প্রতিহত বা ভূপাতিত করতে পারেনি। ইতঃপূর্বে হুথিরা ইসরাইলে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে বিভিন্ন জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠন ইসরাইলি বাহিনীর স্থল আক্রমণ প্রতিহত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা সম্মুখযুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ তৈরি করে তিনটি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে এবং আটজন ইসরাইলি সৈন্যকে হত্যা করেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইল। এর মধ্যে হামাসের যোদ্ধা, কর্মকর্তা ছাড়াও হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ রয়েছেন। যুদ্ধের শুরুতে ইসরাইল জানিয়েছিল, গাজা থেকে হামাসকে তারা পুরোপুরি নির্মূল করে দেবে। তবে এখন পর্যন্ত দখলদার ইসরাইল তাদের এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
২০২৪ সালের অক্টোবরের শুরুতে লেবাননে আক্রমণের পর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলায় এ উপত্যকার হামাস সরকারপ্রধান রাহী মুস্তাহাসহ আরও দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে হত্যার দাবি করেছে দখলদার ইসরাইল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসরাইলের আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সব বৈরী দেশগুলোর ওপর একইসঙ্গে চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে মার্কিনিরা নির্লজ্জের মতো ইসরাইলি বাহিনীকে গোলাবারুদ, রসদ জোগাচ্ছে। ইরানকে তারা প্রত্যক্ষ হুমকি দিলেও ইরান সেটার পালটা জবাব হুমকির মাধ্যমে ফিরিয়ে দিতে দেরি করছে না। হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের এক কমান্ডারকে হত্যার জবাব দিতে মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলে একসঙ্গে ১৮০টি মিসাইল ছোড়ে ইরান।
এ মিসাইল হামলা ইরান-ইসরাইল উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ছক কষছে দখলদার ইসরাইল। মূলত হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পর ইসরাইল সরকারের একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, তারা এখন ভালো অবস্থানে আছে এবং চাইলে ইরানের ধর্মীয় নেতাকেও হত্যা করতে পারবে। আর এমন খবর প্রকাশের পরই নেতানিয়াহুকে ইরানের ‘হিটলিস্টে’ রাখার তথ্য প্রকাশিত হলো। উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি তালিকায় ইরান ‘হত্যা করতে’ চায় এমন ব্যক্তিদের নাম বের রয়েছে। এই ‘হিটলিস্টে’ নাম আছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ তিন বাহিনীর প্রধানের। এছাড়া ইরানের হিটলিস্টে আছে দখলদার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও। ইরানের গোয়েন্দারা বলছেন, নেতানিয়াহুকে না হলেও দখলদার ইসরাইলের বড় নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের দোসররা চুপ করে থাকলেও কাতার, জর্ডান, তুরস্ক, মিসর ইত্যাদি দেশের পাশাপাশি রাশিয়া ও চীনের সুস্পষ্ট অবস্থান এখনো জানা যায়নি। লেবাননে শত শত প্রাণ হারানোর পরও আমেরিকাবিরোধী ব্লক চুপ করে থাকার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে যুদ্ধ দ্রুত ছাড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।