রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ৭৫ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপির খাতায়। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেকোনো সময় হতে পারে সিআরআর-এসএলআর ঘাটতি। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সর্বশেষ সভায় আর্থিক বিপর্যয়ের এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৯ সালে ব্যাংকটির দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ ছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির ৮২৪তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয় ১ অক্টোবর। ওই সভায় যে নথি উপস্থাপন করা হয় সেটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। সেখান থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৯৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকার ঋণ। বিতরণকৃত এ ঋণের অর্ধেকের বেশি তথা ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকাই নিয়েছে মাত্র পাঁচটি গ্রুপ। এর মধ্যে এককভাবে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপই নিয়েছে ২৫ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এস আলম গ্রুপ ১০ হাজার ১৭১ কোটি, এননটেক্স গ্রুপ ৭ হাজার ৭৭৪ কোটি, ক্রিসেন্ট গ্রুপ ৩ হাজার ৮০৭ কোটি এবং ওরিয়ন গ্রুপ ৩ হাজার ১১ কোটি টাকা নিয়েছে।
জনতা ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই জনতা ব্যাংক পর্ষদে রাজনৈতিক নেতা, দলীয় আদর্শের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আমলা ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়োগ দেয়া শুরু হয়। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবুল বারকাত। সেই থেকে জনতা ব্যাংকে যে লুণ্ঠন শুরু হয়, তা গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই লুণ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির সব ক্ষতই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। যে পরিমাণ লুণ্ঠন হয়েছে, তাতে সরকারি সহায়তা না পেলে জনতা ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে।