বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেন। ভয়েস অব আমেরিকার জন্য সাক্ষাৎকারটি নেন আনিস আহমেদ। সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
গত ৮ আগস্ট আপনার দায়িত্ব গ্রহণের মাস দেড়েক পর এসে আমরা লক্ষ করছি যে সেনাবাহিনীর কমিশনড অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি (বিচারিক) ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটার প্রযোজনীয়তা কেন দেখা দিল?
ড. ইউনূস: দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার করার জন্য আমরা চেষ্টা করছিলাম, পুলিশকে দিয়ে করার জন্য। এটাই নিয়ম। কিন্তু পুলিশের মনোবল হারিয়ে গেছে। কারণটা হলো, মানুষের সামনে গেলে তাদের কটু কথা শুনতে হয়। মাত্র কয়েক দিন আগে তারা ছাত্রদের মেরেছে। তাই তারা মানুষের থেকে দূরে দূরে থাকছে। মানুষের সঙ্গে তারা মিশতে চাইছে না। কাজেই আমাদের শান্তিশৃঙ্খলার যে শক্তি, সেটা তাদের মনোবল হারানোয় ক্ষয়ে গেল। আমরা যেটা করলাম যে পুলিশের সবাই তো আর অন্যায় করেনি। যারা অন্যায় করেছে, তারা চিহ্নিত করব, তাদের শাস্তি হবে। বাকিরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া তো একটা লম্বা প্রক্রিয়া। এটা তো হঠাৎ করে হচ্ছে না। ইতিমধ্যে কিন্তু শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। নানা রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, সমাবেশ হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের পোশাকশিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের সন্ত্রাস দেখা গেল। সেগুলো নিয়ে মনে করলাম যে এভাবে চলতে দিলে তো এগুলো বাড়তে আরম্ভ করবে। তখন প্রশ্ন উঠল সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার জন্য। ওদের অনুরোধ করলাম। ওরা রাজি হলো। তারা বলছে, আমরা তো আছিই। কিন্তু আমাদের তো কেউ পরোয়া করছে না। কারণ, আমাদের ক্ষমতা নেই। আমাদের একটা ক্ষমতা থাকলে তখন হয়তো আমাদের গণ্য করতে পারে। তখন আমরা সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিলাম। কিন্তু একটা সীমিত সময়ের জন্য, দুই মাসের জন্য। সেভাবেই হয়েছে এ ঘটনা।
তাহলে আশা করছেন যে আগামী দুই মাসে পুলিশের যে সেবাটা জনগণের জন্য, সেটা ফিরে আসবে?
ড. ইউনূস: আশা করি এ সময়টার মধ্যে তারা পারবে। তারাও দেখছে যে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। সেই দায়িত্ব সেনাবাহিনী পালন করছে। এটা তাদের জন্যও খুব সুখকর কোনো বিষয় না। যে তাদের দায়িত্ব অন্যজন পালন করছে। মাঝখানে আনসার বাহিনীকে দিয়েও করা হয়েছিল। সেটাতেও কোনো কাজ হয়নি। কাজেই এভাবেই সমাধান করার চেষ্টা করছি।
আমরা জানি যে বাংলাদেশের এই সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। আপনার সরকারেও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে শিক্ষার্থীরা দেশের নানা ক্ষেত্রে, নানা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। তো, শিক্ষার্থীরাই কী এখন দেশ পরিচালনা করছেন? কতটা ভূমিকা পালন করছেন?
ড. ইউনূস: করা তো উচিত। তরুণদের হাতেই তো ক্ষমতা যাওয়া উচিত। বুড়োদের তো কোনো কাজ নেই। বুড়োরা তো সব ভুল করে গেছেন এ পর্যন্ত। কাজেই চেষ্টা হোক যে তরুণেরা এগিয়ে আসুক। তারা দায়িত্ব নিক। তরুণরাও ভুলভ্রান্তি করবে। ভুলভ্রান্তি সংশোধন করবে নিজেদের। তাদের নেতৃত্বে তো এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল। কাজেই তাদের অবিশ্বাস করার তো কোনো কারণ আমি দেখছি না।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে আমরা আপনার সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে কিছু শুনিনি। আপনি জাতির উদ্দেশ্যে দুটি ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও জানতে পারিনি। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন যে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তাহলে কি ধরে নেব যে আপনার অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হচ্ছে আগামী ১৮ মাস পর্যন্ত?
ড. ইউনূস: আপনি ইচ্ছে করলে সেটা ধরে নিতে পারেন। কিন্তু সরকারের মতামত তো সেটা নয়। সরকার তো কোনো মত দেয়নি এ পর্যন্ত। কাজেই সরকার কখন মেয়াদ ঠিক করবে, সেটা সরকারকেই বলতে হবে। সরকার না বলা পর্যন্ত তো সেটা মেয়াদ হচ্ছে না।
সরকার বলতে তো আপনাদেরই....
ড. ইউনূস: হ্যাঁ, আমাদেরই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন, সেটাই হবে তারিখ।