ভারতের নদী-সংযোগ মহাপরিকল্পনা যে বাংলাদেশের জন্য এক মরণ পরিকল্পনা, তা বুঝতে রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারত কর্তৃক ৩০টি নদী-সংযোগ করার কথা। এগুলো হচ্ছে-ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা, কোশি-ঘাগড়া, গান্ধাক-গঙ্গা, ঘাগড়া-যমুনা, সারদা-যমুনা, যমুনা-রাজস্থান, রাজস্থান-সাবরমতি, চুনার-শোন ব্যারাজ, শোনবাঁধ-গঙ্গার দক্ষিণের শাখাগুলো, গঙ্গা-দামোদর সুবর্ণরেখা, সুবর্ণরেখা-মহানদী, কোশি-মেচি, ফারাক্কা-সুক্তদরবন, ব্রহ্মপুত্র, মহানদী-গোদাবরী, গোদাবরী (ইনচমপল্লী নিচু বাঁধ)- কৃষ্ণা (নাগার্জুন টেইলপন্ড), গোদাবরী (ইনচমপল্লী)-কৃষ্ণা (নাগার্জুন সাগর), গোদাবরী (পোলাডরম)-কৃষ্ণা, কৃষ্ণা (আলমাত্তি)-পেন্নার, কৃষ্ণা (শ্রীমঙ্গল)-পেন্নার, কৃষ্ণা (নাগার্জুন সাগর)-পেন্নার (সোমাসিলা), পেন্নার (সোমাসিলা)-কাবেরী (গ্রান্ড অ্যানিকুট), কাবেরী (কাত্তালাই) ভাইগাই-গুন্ডর, কেন-বেতওয়া, পার্বতী-কালীসিন্ধু-চম্বল, পরতাপি-নর্মদা, দামনগঙ্গ-পিঞ্জল, বেদর্তি-ভর্দা, নেত্রবতী-হেমবতী, পম্বা-আচনকোভিল-ভাইপ্রর। এরপরও ৭৪টি বিশাল জলাশয় এবং আরও বাঁধ তৈরি করা হবে, যেখানে সংযুক্ত থাকবে ৩৮টি নদনদী।
প্রথম এ পরিকল্পনার কথা ফাঁস হয়ে গেলে, ভারত বিষয়টি জরিপ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানায়। তখন বাংলাদেশ বিষয়টি মন্ত্রিপর্যায়ের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে ভারত এটিকে গুরুত্বহীন অভিহিত করে আপত্তি জানায়। ভারত একই চাতুরী করেছিল ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সময়-আলোচনার কথা বলে ঠিকই বাঁধ নির্মাণ শেষে একতরফা পানি প্রত্যাহার শুরু করেছিল। তাই আমাদের জানতে হবে, আন্তর্জাতিক পানিসংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী। ভারত আন্তর্জাতিক চুক্তি, কনভেনশন, প্রটোকল ও আদালতের পানিসম্পদসংক্রান্ত রায় নিয়ে কী ভাবছে। নদী-সংযোগ পরিকল্পনা, এমনকি ফারাক্কা বাঁধ কতটুকু আইনানুগ ও যুক্তিসংগত? এ প্রেক্ষাপটে নদী-সংযোগ পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের করণীয় কী। কী উপায়ে ভারতের মতো বৃহৎ শক্তিকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিরত রাখা যায়। এ দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জরুরি পদক্ষেপগুলো কী। তবে এখনই এ ভয়াবহ সমস্যা সম্পর্কে দেশের জনগণকে জানাতে হবে। বিশ্ব জনমতকে পক্ষে আনতে আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে হবে। এ পরিকল্পনার ভয়াবহতা সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য, উপাত্ত ও প্রামাণ্যচিত্র বিভিন্ন কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আদালতে সরবরাহ করতে হবে।