আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান। বিভিন্ন সময় জনগুরুত্বপূর্ণ এবং নানা অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলে তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হন তিনি। রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া এই বিশিষ্টজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ
কালের কণ্ঠ : ২০০৯ সালে আপনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
কেন পদত্যাগ করেছিলেন?
সোহেল তাজ : রাজনীতিতে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম। আমেরিকায় লেখাপড়া করেছি। সেখানেই আমার সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিল। কিন্তু ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে ভেতর থেকে তাগিদ পেলাম, ‘দেশের জন্য কিছু করা দরকার।
দেশে ফিরে অনেক বাধা পেরিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করি। ২০০১ সালে যখন আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়, তখনো নির্বাচিত হয়েছিলাম। নৌকা নিয়ে বিজয়ী ৫৮ সিটের মধ্যে আমার একটি ছিল। সব মিলিয়ে আমার যাত্রাটাই শুরু হয় বিরোধীদলীয় রাজনীতি দিয়ে।
বিরোধী দলে থাকাকালে অনেক নির্যাতিত হয়েছি, পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছি, আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছি। এক-এগারোর পর ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ১৯৭১ সালে যে লক্ষ্য সামনে রেখে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের রূপরেখা ছিল এই ইশতেহার, যা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করে। দেশের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যাশায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল।
পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখলাম, দিনবদলের সনদ ছিল ভাঁওতাবাজি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেখলাম অদৃশ্য কিছু শক্তি এসে ম্যানুপুলেশনের চেষ্টা করছে। মিটিংয়ে বলেছিলাম, আজ থেকে সব বদলি বাণিজ্য বন্ধ! পুলিশ সংস্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার পথে নানা বাধা সৃষ্টি করা হয়।
শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা করতাম। যদিও অনেকে আমাকে বলেছেন, হাসিনা কখনো তাজউদ্দীন আহমদের ছেলেকে ভালো চোখে দেখবেন না। এক দিন দেখলাম আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাকে সবার সামনে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘বিএনপি অনেক টাকা বানিয়েছে। এখন আমাদেরও দুই হাতে টাকা বানাতে হবে।’ এটা শোনার পর তাঁর প্রতি আর বিন্দুমাত্র রেসপেক্ট থাকেনি। আরো অনেক বিষয় মিলিয়ে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমি যখন কাজ করতে চাচ্ছিলাম তখন দেখলাম আমার কোনো নির্দেশনা ফলো হচ্ছে না। পরে জানতে পেরেছি, আমার অধীন সব কর্মকর্তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা মানা যাবে না! এই অবস্থায় পদত্যাগ ছাড়া অন্য পথ দেখিনি।