পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষ কি আন্তরিক?

বাংলা ট্রিবিউন ড. সুলতান মাহমুদ রানা প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:০৩

পাহাড়ে উত্তেজনা ও সংঘাত হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের উত্তেজনা ও সংঘর্ষ-সংঘাতের রেশ ছড়িয়েছে পাশের জেলা রাঙামাটিতেও। পার্বত্য অঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠুক, সেটা কারোরই কাম্য নয়। পাহাড়ে অশান্তি আপাতত থামলেও যে ক্ষোভ ক্রোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা যদি ভবিষ্যতে আরও গভীর হয় তাহলে সেটি অধিকভাবে শঙ্কার কারণ হয়ে উঠবে। এমনকি সেটি সামাল দেওয়া প্রশাসনের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে।


ঘটনার জন্য পাহাড়ি ও অভিবাসী দুই পক্ষ থেকে পরস্পরকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে ঘটনাটি চরম সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে গুজব। সশস্ত্র আক্রমণের গুজব, অসংখ্য মানুষকে মেরে ফেলার গুজব। গুজবে গুজবে হিংসা ছড়ায়, আর জ্বলতে থাকে বাড়িঘর। এরপর মাঠে নামে সেনাবাহিনী। পাহাড়িদের অভিযোগ, অভিবাসীরা সেনাদের প্রশ্রয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। পাহাড়িদের ওপর গুলি চালায়। সেনাদের অভিযোগ, পাহাড়িরা সশস্ত্র হয়ে সেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। আত্মরক্ষার্থে সেনারাও গুলি করে।


পার্বত্য চট্টগ্রামে যা হয়েছে, যা হচ্ছে, এর সমাধান দরকার। গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে সরকার বিপুল সামরিক বাহিনীর সদস্য পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চেয়ে পাহাড়ের সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। তখন সেখানে সশস্ত্র সংঘর্ষও হয়। প্রায় দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের ইতি হয়েছিল ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এই চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে পরে তেমন কোনও আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এক কথায় বলা যায়, দীর্ঘ তিন দশক ধরে পাহাড়ের সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়েছে।



আমাদের মনে রাখতে হবে, পাহাড় বাংলাদেশের বাইরের কোনও এলাকা নয়। পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙালিদের সেটেলার বলে এক ধরনের উসকানি চলে সেখানে। এমনকি অনেক মিডিয়া এবং অ্যাকটিভিস্ট নেতিবাচক প্রচারণা চালায়। পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। পার্বত্য এলাকা যদি বাংলাদেশ ভূখণ্ড হয়, সেখানে যদি কেউ জমি কিনে বাস করে, তাদের সেটেলার বলা যাবে কিনা সেটি একটি বড় প্রশ্ন। কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরির বিষয়টি নিঃসন্দেহে উসকানিমূলক এবং ষড়যন্ত্র। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এখানে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র রয়েছে। নানা ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। পাহাড়িদের স্বাধীন দেশ গঠনের মাধ্যমে তাদের মুক্তি আসবে- এমন চিন্তা ন্যায্য কিনা সেটি খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবতে হবে। কোনও অন্যায্য বিষয়কে ন্যায্য এবং ইতিবাচক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি শুভ নয়। অযথা ভিন্ন ভিন্ন প্রলোভনে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করার ষড়যন্ত্রে পা রাখা কোনোভাবেই ন্যায্য হবে না।


সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার সমান। পাহাড়িদের অবশ্যই সোচ্চার থাকতে হবে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। তাদের কোনও বৈষম্য করা যাবে না। মূলত নিজেদের নাগরিক অধিকারের দাবিতে পাহাড়িদের সোচ্চার থাকাই তাদের রাজনীতি হওয়া উচিত।


আমরা সবাই দেশের অখণ্ডতায় বিশ্বাস করি। আমরা অবশ্যই সবাই পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর অধিকারের পক্ষে। কাজেই পাহাড়ে বিদ্যমান পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠীকে আলোচনায় বসানোর সময় এসেছে। নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে সবাইকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হয় এমন ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। এক্ষেত্রে সব পাহাড়িকে অধিকার রক্ষার বিষয়ে সচেষ্ট থেকে দেশের অখণ্ডতার প্রশ্নে ঐকমত্য থাকা উচিত। কোনও ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, সব ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে আগামীর দিনগুলো আরও ভয়াবহ হতে পারে। এক্ষেত্রে সংঘাতময় উত্তেজনার ধারা থেকে বের হয়ে আসার পথ-পদ্ধতি অবিলম্বে খুঁজে বের করার দায়িত্ব আমাদের সবার। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার যে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে না পারলে দেশের শান্তিও বিনষ্ট হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us