যখন ইলিশ ধরার নিয়ম-কানুনের বালাই ছিল না তখন ভাদ্র-আশ্বিন মাসে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। নদী-সাগর সব জায়গায় বড় বড় ইলিশের আনাগোনা থাকতো এবং ট্রাক ছাড়াও রেলগাড়িতে দেশের আনাচে-কানাচে সব জায়গার বাজারে চালান হয়ে যেত। স্থানীয় লোকজন বলতো আজ বাজারে চালানি মাছের ছড়াছড়ি। দামও অনেক সস্তা থাকতো।
গ্রামের মানুষ সস্তা ইলিশ কিনে বছরের এই দিনগুলোতে মজা করে খেতে পারতো এবং স্বজনদের বাড়িতে পাঠাতো। এখন ভাদ্র যায়, আশ্বিন যায়, গ্রামের বাজারে ইলিশ আসে না। হাট-বাজারে কিনতে পওয়া যায় ইলিশের মতো দেখতে ওমান-সুদানের সমুদ্রে ধরা বিদেশি শক্ত চন্দনা মাছ। অনেকে ইলশেগুঁড়ি ভেবে চন্দনা মাছ একবার কিনে আনার পর ঠকে গেলে আর কখনও কিনতে চান না, অন্যকে কিনতেও নিষেধ করেন!
এবছর ভাদ্র মাসে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে নদী-সমুদ্র থেকে প্রচুর ইলিশ আহরণ করার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটে ইউটিউব, ফেসবুকের সুবাদে আজকাল দুনিয়ার কোথায় কি হয়, কি ঘটে তা গোপন রাখার কোনো ফুরসত নেই। সেদিন সকালে কক্সবাজারে নিকট সমুদ্রে একটি ৩০ কেজির পোপা মাছ ধরা পড়ে। তার দাম হাঁকা হয়েছে সাত লাখ টাকা। কারণ, পোপা মাছের ফুসফুসের আবরণ দিয়ে এক ধরনের সার্জিক্যাল সুতা তৈরি হয়, যার দাম অনেক বেশি। সমুদ্রগামী জেলেরা আজকাল এই তথ্য জানেন। তাই এই মাছ পেলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলে নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন। ছবি দেখে বিক্রিও হয়ে যায়। জেলেরা সামান্য দাম পেলেও সেই বিভিন্ন মাছ হাতবদল হয়ে বড় মাছ ব্যবসায়ীর কাছে চলে গিয়ে অকল্পনীয় দামে বিক্রি হয়- জেলেরা সেটা জানতেও পারেন না। এটাই ইন্টারনেটের কারসাজি। ইলিশ নিয়ে কারসাজিটা আরও বিচিত্র।