‘মব জাস্টিস’: সুবিচার কোন পথে...

ডেইলি স্টার শুভ কিবরিয়া প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৯

একটার পর একটা জন-উচ্ছৃঙ্খলতার খবর মিলছে। 'মব জাস্টিসে'র নামে মানুষ পিটিয়ে হত্যার প্রবণতা বাড়ছে। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো ঘটনা পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। সংবাদপত্রে খবর এসেছে এরকম ঘটনা দেশের আনাচে-কানাচে ঘটেই চলেছে। দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকায় ৩৮ দিনের মধ্যে চারজন নিহত হয়েছেন—যাত্রাবাড়ীতে দুজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন।


১১ আগস্ট ও ১৫ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরে তিনজনকে হত্যা করা হয়। ১২ আগস্ট গাজীপুরে দুই যুবককে হত্যা করা হয়। ১২ আগস্ট নাটোরে ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। ১৩ আগস্ট বরিশালে ২০ বছর বয়সী এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বগুড়ায় ৩১ আগস্ট ও ১৮ সেপ্টেম্বর দুইজনকে হত্যা করা হয়।


গত ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা খুন হন। ৪ সেপ্টেম্বর খুলনায় ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ফরিদপুরে ১১ সেপ্টেম্বর এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠিতে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।


এই প্রবণতা কেন


১. প্রথমত, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক ও নড়বড়ে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যারা নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, সেই প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দুটোর অবস্থাই কাহিল। তাদের নৈতিক-মানবিক-আদর্শিক-রাষ্ট্রনৈতিক অবস্থান ভীষণ দুর্বল। ফলে, এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা চোখে পড়ছে না। মানুষ তাদের সক্রিয় দেখছে না। কবে তারা সক্রিয় ও সবল হবেন, সেই লক্ষণও সুস্পষ্ট নয়। সে কারণেই কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা বা অরাজকতা আইনসম্মতভাবে বাধা পাচ্ছে না। বরং এই উচ্ছৃঙ্খলতা বা অরাজকতা ভীষণভাবেই দায়মুক্তির সম্ভাবনাকে বড় করে দেখছে। সেটা মব জাস্টিস বা লিঞ্চিং বা গণশাস্তির জনপ্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে।



২. স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা জনদ্রোহকে রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। জনঅভ্যুত্থান দমন করতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে নর্মস ও রীতি ভেঙে, নিরস্ত্র জনগণের ওপর অস্ত্র ও গোলাবারুদ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করেছে, সেটা গোটা জাতির মনস্তত্ত্বে এক বিরাট বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে।


শেখ হাসিনার পলায়ন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতি, ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ-যুবলীগের পরাজয় সত্ত্বেও সেই বিশৃঙ্খল মনোভাব জনমনস্তত্ত্বে সজাগ রয়েছে। ফলে, সুবিচারের দীর্ঘ ও নিয়মতান্ত্রিক পথে অপেক্ষার বদলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতার সুযোগে ভয়-ডরহীনভাবেই মানুষ নিজেদের হাতেই বিচারকে তুলে নিতে প্ররোচিত হচ্ছে।


৩. বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাঙ্গনে যে মব জাস্টিস সংগঠিত হয়েছে, সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে কারা? যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তারা মূলত ছাত্ররাজনীতিরই প্রোডাক্ট। আমাদের ছাত্ররাজনীতি গত দুই দশকে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে পারেনি। ছাত্রলীগ রাজনীতি করেছে সরকারি মদদে, শক্তির ওপর ভর করে। অন্যদের রাজনীতি করতে হয়েছে ছাত্রলীগের শাস্তির কথা মাথায় রেখেই। ফলে একদিকে 'ভয়ের সংস্কৃতি', অন্যদিকে প্রশাসনের সহায়তায় ছাত্রলীগের 'যা ইচ্ছা তাই করার অবাধ স্বাধীনতা'র সংস্কৃতিই আমাদের শিক্ষাঙ্গনের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মনস্তত্ব কোনো সুবিবেচনাকে সুস্থির হতে দেয়নি। শিক্ষাঙ্গনে মব জাস্টিস তারই প্রতিক্রিয়া।


৪. এমনিতেই আমাদের এখানে স্বাভাবিক বিচারকাজ শেষ হতে লম্বা সময় লাগে। এক স্টাডিতে বলা হয়েছে, এখানে একটা স্বাভাবিক বিচারকাজ শেষ হতে মামলাপ্রতি প্রায় ২৯ বছর সময় লাগে। আবার সুদীর্ঘ সময় ধরে বিচারকাজ চললে তাতে সুবিচার কতটা নিশ্চিত হয়, সেটাও একটা প্রশ্ন। এই লম্বা সময় বিচার চালিয়ে যেতে প্রয়োজন হয় একটা বড় আর্থিক সামর্থ্য। অন্যদিকে বিচারকাজে দুর্নীতি, অনিয়মের কথা তো থাকছেই। কাজেই, বিচার হলেই যে সেটা সুবিচার আনবে, ভুক্তভোগীকে সত্যি সত্যিই স্বস্তি দেবে, সেটাও বলা মুশকিল। কাজেই হাতের কাছে কথিত অভিযুক্তকে পেলে নগদে শাস্তি দেওয়ার বাধাহীন সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় উত্তেজক জনতা। মব জাস্টিসের সেটাও একটা বড় কারণ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us