মব লিঞ্চিং: হায়, মানুষ কবে মানুষ হবে

প্রথম আলো আফসানা বেগম প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৫০

‘গেস্টরুমে চোরের হাত বেঁধেছে জালাল। সুমন চোখ বন্ধ করে মেরেছে তাকে। মারতে মারতে ও (তোফাজ্জল) পড়ে গেছে। এরপর পানি এনে তাকে পানি খাওয়ানো হলে সে উঠে বসে। এ সময়ে সবাই হাততালি দেয়।’


হ্যাঁ, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ তোফাজ্জল নামের এক যুবককে গ্যাং পদ্ধতিতে পিটিয়ে মারার বর্ণনার একাংশ। আধামরা হওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের মনে হলো এত মার খেয়েছে, নাহয় কিছু ভাতও খাক। খাইয়ে নিয়ে আবারও মারা হলো তাঁকে। মারতে মারতে তাঁকে মেরেই ফেলা হলো।


এক থালা ভাতের জন্য দৈনিক কে জানে কত মানুষ হাপিত্যেশ করে। কতজনের কপালে বিনা পরিশ্রমে জোটে এক থালা ভাত? তাই খেয়ে ফেলাই শ্রেয়। দেশের মানুষ এর আগে বহুরকম ভাত খাওয়ার দৃশ্য দেখেছে। কিন্তু এত বেদনাদায়ক ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি, এত নির্মম লোকমা কেউ কি দেখেছেন কখনো!


যা হোক, গ্যাং বিষয়টা তো এমনই ‘মব’ বা ‘ফিক্ল’। ‘মব মনস্তত্ত্ব’ বড় অদ্ভুত জিনিস। একবার মধ্যরাতে দিল্লিতে এক ঝোঁপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে দুজন সাইকেল আরোহী একটা মেয়ের আর্তনাদ শুনতে পায়। সাইকেল থেকে নেমে তারা দ্রুত যায় কল্পিত কোনো জীবজন্তুর হাত থেকে একজন মানুষ কিংবা সমাজে ঊনমানুষ হিসেবে বিচরণকারী কোনো নারীকে উদ্ধার করতে। গিয়ে দেখে সেখানে দশ-বারোজনের গ্যাং তাকে ধর্ষণ করছে। উদ্ধার করার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে তখন তারা তাৎক্ষণিকভাবে সেই ধর্ষণে অংশ নেয়। ‘মব’ হয় এ রকম, যুক্তি কাজ করে না, বোধবুদ্ধি কাজ করে না।



যে কারণে সেই যে এক নারী, রেণু তার বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে এসেছিলেন, ছেলেধরা সন্দেহে তাকে পাশ দিয়ে যে গেছে সে-ই কিল-ঘুষি লাগিয়ে গেছে। কারও জানতে ইচ্ছে করেনি, কাকে মারছে, কেন মারছে। সমাজের অসংখ্য অসংগতির নিষ্পেষণে মানুষের বুকে ক্ষোভের পাহাড় থাকে আইসবার্গের মতো লুকিয়ে। হাত নিশপিশ করে, কাউকে পেলে খুব একহাত দেখে নেওয়া যেত!


ধরুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নিগ্ধ পরিবেশে আপনি বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। কিন্তু আপনার মূল ইচ্ছা ছাত্রলীগের জেনেটিক পরিবর্তন করে দেওয়ার। সে জন্য আপনি বিচারের অপেক্ষা করবেন না। কেন করবেন, আপনার হাতে আছে ইয়া বড় লাঠি। ব্যস, ব্যবহার করুন। মারতে মারতে হয়রান হয়ে গেলে আধামরা ছেলেটিকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যান, যেন সেখানে প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে আরেক গ্যাংও যেন তাকে মারতে পারে। এরপর তার মৃত্যু হলে প্রতিপক্ষ নিধনের গর্ব তখন বুকে ভর করে।


ঢাকা আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আর মুখ দেখানোর জায়গা থাকে না। যেন কী এক পবিত্র স্থান ছিল এগুলো! ঢাকার কথা তো বলাই বাহুল্য, বছর বছর খুনজখম, নারীকে হেনস্থা করা থেকে শুরু করে কিছুই যেখানে বাদ নেই।


জাহাঙ্গীরনগরে প্রায় জন্মলগ্ন থেকে ছাত্রহত্যা শুরু হয়েছে। অন্তত সাতজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে তখন থেকে। ১৯৭৩ সালে প্রথম হত্যা করা হয় জাকসুর প্রথম সাধারণ সম্পাদক জাসদ নেতা বোরহান উদ্দীন রোকনকে। সেই পথ ধরে ১৯৯৪ সালে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র দীপুর হত্যাকাণ্ড ভোলার নয়। অনেক পরে আরেকজন জুবায়ের হত্যাকাণ্ড তো বিচারের কাঠগড়ায় প্রায় পৌঁছেও গেছিল। কিন্তু বিচার...সে এক সোনার হরিণ নাকি ডুমুরের ফুল!

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us