বর্তমানে দেশের ৬০ লাখ লোকের রুটি-রুজির আধার হলো অটোরিকশা ও ইজিবাইক। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই বৃহৎ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি বন্ধ করতে বিভিন্ন অপচেষ্টা চলছে। শুক্রবার সমকালের শেষের পাতায় প্রকাশিত একটি ছবি আমাদের নজর কেড়েছে, যেখানে ৭ থেকে ৮টি অটোরিকশা উল্টো করে রাখা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে এমপি, মন্ত্রী, মেয়রসহ অনেকে অটোরিকশা ও ইজিবাইক বন্ধের বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, এসব যানবাহন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খায়, যা লোডশেডিং বাড়াতে সহায়তা করে। তবে বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে নিপীড়নমূলক সিদ্ধান্তটি তাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তখন উচ্চ আদালতও এক আদেশে বলে দেয়, মহাসড়ক ও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছাড়া অন্যত্র এসব যান চলাচল করবে।
এরই মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর তা আমরা প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় বুঝতে পারি। শহরের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ অটোরিকশাগুলো উল্টো করে জব্দ করে রাখে। সংবাদমাধ্যমে ইতোপূর্বে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির বহু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, যদিও আপাতত তা বন্ধ বলেই মনে হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক নিয়ে সরকার যদি ন্যায়সংগত সমাধান না দেয়, তা হলে এ নিয়ে সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা লেগেই থাকবে।
এই ক’দিন আগেও পায়ে চালিত বা প্যাডেল রিকশা ও অটোরিকশাকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট শাহবাগে পায়ে চালিত রিকশাচালকরা বৈষম্যের কথা বলে অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে সমাবেশ করেছিল, যদিও সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
অতিরিক্ত বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে এই বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগটি বন্ধ করা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। যানজটের বিষয়টি সামনে এনেও এগুলো বন্ধের পক্ষে ভালো যুক্তি দাঁড় করানো অসম্ভব। ইতোমধ্যে বহু সমীক্ষায় এ প্রমাণিত যে, সড়কে যানজটে ব্যক্তিগত মোটরযানের ভূমিকা সবার চেয়ে বেশি।
এটা সত্য যে, অটোরিকশা যে পরিমাণে দ্রুতগতিতে চলার ক্ষমতা রাখে সে তুলনায় দুর্ঘটনা এড়ানোর সক্ষমতা রাখে না। ফলে যাত্রীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা কাজ করে। তবে এই কারণে নিশ্চয় ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান বন্ধ করে দেওয়া যায় না। তাছাড়া নীতিনির্ধারকদের এ ধরনের চিন্তাভাবনাও গণবিরোধী ও নিপীড়নমূলক। খেয়াল করা দরকার, ইতোমধ্যে অটোরিকশায় কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে। বসার জায়গা যেমন বেড়েছে, তেমনি চারপাশের নিরাপত্তাবলয়ও বেশ শক্তিশালী। এতে দুর্ঘটনা ঝুঁকি ও যাত্রীদের উদ্বেগ দুটোই কমেছে।
সম্প্রতি দেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। এমন বাস্তবতায় দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আসলেই জরুরি হয়ে উঠেছে। সেটা করতে গিয়ে আমরা যেন দুর্বল ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর ছোবলটা না মারি। তবে পায়ে চালিত রিকশাগুলো সরাসরি অটোরিকশায় রূপ না দিয়ে বরং কাঠামোগত পরিবর্তনও আনতে পারলে ভালো হয়। এতে যানবাহনটি একদিকে যেমন টেকসই হয়, তেমনিভাবে যাত্রীদের জন্যও নিরাপদ।