জ্বালানি তেলের দাম যে পরিমাণ কমেছে, সে হিসাবে বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব খুবই কম দেখা যাচ্ছে।তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আরও হ্রাস পেতে পারত দ্রব্যমূল্যে– সাধারণ জনগণ তাই মনে করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের বাজারে যে প্রভাব দেখা যায়, মূল্য হ্রাসে সে প্রভাব পড়ে না। জ্বালানি তেল এমন একটি দ্রব্য যার মূল্য বাড়লে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পায়। চাষাবাদ থেকে শিল্প-কারখানা পরিচালন– সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জ্বালানি। তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের দাম লাগানহীনভাবে বেড়ে যায়। ফলে অস্বস্তিকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সমাজ ও রাষ্ট্রে। জ্বালানির মূল্য হ্রাসে উল্টোটা অর্থাৎ দাম কমার ঘটনা ঘটেই না বললে চলে।
সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। ঘোষিত দামে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমেছে ১ টাকা ২৫ পয়সা। পেট্রোল ও অকটেনের দাম কমেছে ৬ টাকা। সরকারের নতুন মূল্য নির্ধারণে লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা। পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ১২৭ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২১ টাকা ও অকটেনের দাম ১৩১ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২৫ টাকা।
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ মার্চ থেকে শুরু করা হয়েছিল। নতুন দাম ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে ৩১ অগাস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাস দ্রব্য হিসাবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রোলের দাম বেশি রাখা হয়।
অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করে সব সময় মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তেলের দাম আরও কমানো উচিত। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বিপিসির প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক কম। ফলে পণ্যটি আমদানিতে বিপিসির খরচও অনেক কম। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিপিসি ভোক্তার কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহের পরিবর্তে মুনাফায় মনোযোগ দিচ্ছে বেশি।
বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে রেকর্ড পতন হয়েছে। ২০২১ সালের পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলারের নিচে নেমেছে। অনেকের আশঙ্কা, তেলের দাম ৬০ ডলারে নেমে যেতে পারে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে চীন। তাদের চাহিদার ওপর বিশ্ব বাজারে তেলের দাম অনেকটা নির্ভর করে। কিন্তু সেই চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। সেখানে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ায় তেলের বাজারে মন্দাভাব তৈরি হয়েছে। বছরের প্রথম ভাগে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনের তেল আমদানি কমেছে। চাহিদা কম থাকায় তেল খুব একটা মজুত করছে না চীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম কমার এটাই মূল কারণ।