বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের মাসপূর্তি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ছাত্র-জনতার জমায়েত থেকে ঘোষিত হয়েছে নতুন পাঁচ দফা কর্মসূচি। দফাগুলো হলো-গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা, শহিদ পরিবারগুলোর আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান, প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা, গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করা এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা। যৌক্তিক এসব প্রস্তাবনা আধুনিক চিন্তা-চেতনারই ফসল। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভরা মেধাবী নেতৃত্বের সমন্বয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ব্রত আশা জাগায়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকেও জনগণেরই মনের কথা উচ্চারিত হয়েছে। সমাবেশে স্পষ্ট করা হয়, কেউ যদি এ বাংলাদেশে আবারও স্বৈরাচার হতে চায়, তাহলে ছাত্রসমাজ যুগে যুগে যেভাবে স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে লড়েছে, একইভাবে তাদেরকেও রুখে দেওয়া হবে। এই চট্টলায় কোনো চাঁদাবাজ-লুঠতরাজের ঠাঁই হবে না বলে কঠোর হুশিয়ারি দেওয়া হয়। তাছাড়া ওই সমাবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সংস্কারের পর নির্বাচনের দিকে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
প্রকৃত অর্থেই সার্বিক রাষ্ট্র মেরামতের উদ্দেশ্যে উত্থাপিত বিষয়গুলো বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানকে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ভবিষ্যৎ নির্মাণের উপযোগী। বিরাজমান অস্থিরতা নিরসনে সামষ্টিক উদ্যোগ গ্রহণও জরুরি হয়ে পড়েছে। কতিপয় দুর্বৃত্তের দখল-লুটপাট-সন্ত্রাসের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। জনগণের জানমাল নিরাপত্তায় ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা তাই প্রত্যাশিত। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ১২ দিনের মধ্যে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার ফলে সৃষ্ট বন্যায় পর্যুদস্ত হয় দেশের বেশকিছু অঞ্চল। বানভাসি মানুষের আর্তনাদে এখনো বাতাস ভারী।
জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বন্যা মোকাবিলায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থাসহ জনগণের সহযোগিতায় বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে। ২৪ আগস্ট গঠন করা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া লক্ষণীয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ওই তহবিলে জমা দেন তাদের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটিতে চলা গণত্রাণ কর্মসূচিতে সংগৃহীত ১১ কোটি টাকার অধিক আর্থিক সহায়তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সার্থক গণঅভ্যুত্থানের পবিত্র ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিগত সরকার পতনের স্বল্প সময়ের মধ্যেই গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে অভিষিক্ত হন শান্তিতে নোবেলজয়ী বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি বিশ্বে বাংলাদেশকে নবতর পরিচয়ে ঋদ্ধ করেছে। সরকার গঠনের পর থেকেই তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে সিক্ত হয়েছেন। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তারা সবাই ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। চিঠিতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করাসহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অঙ্গীকারের বিষয়টি উল্লেখ করেন।