সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। এর আগে তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৯ সালে তিনি টাইম সাময়িকীর ‘হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট’ খেতাব লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি ফিলিপাইনভিত্তিক র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। দেশের পরিবেশ, বন, পানিসম্পদ খাত ও বর্তমান সরকারের মেয়াদ এবং পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে–পরে নিজের অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল। এটা মাথায় রেখে আমাদের বর্তমান অবস্থানের মূল্যায়ন করতে হবে। তিন দিন দেশে ওই অর্থে কোনো সরকার ছিল না। আমরা যাঁরা দায়িত্ব নিয়েছি, তাঁদের অন্য কিছু ভাবনার সুযোগ ছিল না। আমরা একটা ট্রমার মধ্যে ওই দায়িত্ব নিয়েছি।
দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব কাজ করতে চেষ্টা করছি, তা করতে গিয়ে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। ৩০ বছর ধরে অনেক দরজা খোলা হয়নি, ধুলো জমেছে। আমাদের সেসব দরজা খুলতে হচ্ছে। অনেক দিন ধরে যাঁরা যেসব বিষয়ে শুধু না বলতেন, তাঁদের হ্যাঁ বলাতে হচ্ছে। কাজটা বেশ কঠিন, তবে অসম্ভব না।
তবে সরকারে যুক্ত হওয়ার আগে পরিবেশ, বন ও নদী নিয়ে আইনি লড়াই করতাম। এসব বিষয়ে আন্দোলন ও সচেতনতা তৈরির সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। ফলে দেশের পরিবেশ, বন ও নদীর মূল সমস্যাগুলোর সঙ্গে পরিচয় ছিল। আগে সমস্যাগুলো নিয়ে বেশি কথা বলতাম। সমাধানের পথ হিসেবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ও সদিচ্ছা আনার জন্য চাপ তৈরি করতাম। এখন আমাকে সমাধানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ঐক্য তৈরির কাজ করতে হচ্ছে।
অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: অন্য সরকারগুলোর সঙ্গে আমাদের কাজের ধরনে বেশ পার্থক্য আছে। কোনো একটি রাজনৈতিক দল সরকারের দায়িত্ব নিলে তাদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে সাধারণ ঐকমত্য থাকে। তারা একটি রাজনৈতিক দল ও মতের পক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে। ফলে বেশির ভাগ বিষয়ে তাদের একটি অভিন্ন অবস্থান থাকে।
আমরা যাঁরা এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছি, তাঁদের খুব কম জনেরই একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। একসঙ্গে বিবৃতি দেওয়া ও দেখাসাক্ষাৎ হয়তো হতো। কিন্তু একসঙ্গে একই মতের অনুসারী হিসেবে আমরা ছিলাম না। অনেককে একদম চিনতামই না, কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে জানতাম। ফলে এ ধরনের বেশ কয়েকজন মানুষ একসঙ্গে আমরা সরকারে কাজ করছি।
আমাদের মধ্যে পরিচিত হওয়া ও মনোভাবগুলো বুঝতে তো কিছুটা সময় লাগবে। উপদেষ্টাদের সভায় আমরা বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মত দিই, আলোচনা করি ও তারপর সিদ্ধান্ত নিই।
পরিবেশের কোন কোন বিষয় আপনার মেয়াদে অগ্রাধিকার পেতে যাচ্ছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনে ফুটবল একাডেমি নির্মাণ বন্ধ করেছি। বিকল্প জায়গায় ওই একাডেমি নির্মাণের ব্যাপারেও উদ্যোগ নিয়েছি। সেখানকার সংরক্ষিত বনে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির স্থাপনা নির্মাণের জন্য সরকার থেকে ৭০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেটিও বাতিল করার ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গাজীপুরে বনের জমি দখলকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করার কাজ চলছে।
বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে মাইক্রোপ্লাস্টিক সামনে এসেছে। মানুষের মস্তিষ্কেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সচিবালয়ে বন্ধ করেছি। সুপারশপগুলোয়ও পলিথিন ব্যাগ বন্ধে কাজ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করব। তবে একই সঙ্গে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য আমরা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, যারা পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ তৈরি করবে, তাদেরও সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি।