জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনীতির এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা তৈরি করে। প্রথমত এই অভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা সংঘটিত হয়নি, হয়েছে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এবং অতি অল্প সময়ে। সে কারণে এই সরকারের ওপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগের নৈতিক অধিকার নেই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেনাবাহিনী মৌনতা অবলম্বন করে তাদের সমর্থন ও সাহস যুগিয়েছে। সুশীল সমাজ, এনজিওপাড়া, বিদেশি সংস্থার পরোক্ষ ভূমিকার কথাও শোনা যায়।
অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারপ্রধান হয়েছেন বিশ্বখ্যাত প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, যাঁর দেশ-বিদেশে বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব আছে। সুতরাং ব্যক্তি হিসেবেও তিনি কোনো দুর্বল ব্যক্তি নন। তাঁকে কোনো দল ও নেতা-নেত্রীকে সমীহ ও তোয়াজ করে চলতে হবে, এমনটা মনে হয় না।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কী অবস্থা?
দলটির নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়ন করলে দলটির নেতা-কর্মীরাও জীবন বাঁচাতে আত্মগোপন করেন, অনেকে বিদেশে পালিয়ে যান, কেউ কেউ পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন, অনেককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, অনেকে খুনও হন। মোটকথা দলটি এখন অস্তিত্বের সংকটে নিমজ্জিত। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা ও মার্কিন দেশে থাকা তাঁর ছেলে জয়ের বক্তব্য দলটির নেতা-কর্মীদের যতটা না স্বস্তির কারণ হয়েছে, তারচেয়ে অধিক অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ এখন সারা দেশে ছাত্র-জনতার ক্রোধ ও প্রতিহিংসার কবলে। তারা এখন ফের কীভাবে রাজনীতিতে সংগঠিত হবে, ঘুরে দাঁড়াবে, তার হয়তো কৌশল ভাবছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে আজকের অবস্থাটাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য শেষ কথা—এমনটা নয়। বাংলাদেশের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়তো এই অবস্থা শিগগির পাল্টে দিতে পারে। কীভাবে?
ভবিষ্যৎ ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো পক্ষ তাদের নিজ স্বার্থে তাদের সঙ্গে কোনো গোপন আঁতাত ও বোঝাপড়ায় আসতে পারে। সেটা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বিএনপি কি তাহলে ক্ষমতায় যাচ্ছে?
জুলাই অভ্যুত্থান বিএনপির জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তাদের জন্য মাঠটি ফাঁকা হয়ে যায়। সরকার পতনের পরপরই সর্বত্রই পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, সর্বত্র তাঁদের মহড়াও শুরু হয়ে যায়। নেতা-কর্মীদের মধ্যে শাসক দলের ভাবভঙ্গি আমেজ চলে আসে। কোণঠাসা ও নীরব থাকা সমর্থকেরাও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কিন্তু অজানা বাস্তবতায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক সমীকরণ কি এতটা সরল ও সহজ হবে তাঁদের জন্য?
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভাষণে অনেক কথা বলেছেন। বিএনপি তাতে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তাদের নেতা মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ (রূপরেখা) দেবেন। আমরা গণতন্ত্রে উত্তরণের সেই রোডম্যাপ ওনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি। ধোঁয়াশা এখনো পরিষ্কার হয়নি।’ ইতিমধ্যে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ১/১১-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।