অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাসে মূল্যস্ফীতি কমার সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। দ্রব্যমূল্যে আহামরি পরিবর্তন না হলেও কমার যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত কয়েক বছর ধরেই দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা দৃশ্যমান। স্বাভাবিক কারণেই জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যায়। জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি যেখানে ১৪ দশমিক ১০ পয়েন্ট ছিল, আগস্টে তা কমে হয় ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যেখানে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে থাকা জরুরি, সেখানে বর্তমান অবস্থানও যে অস্বস্তিকর; বলার অপেক্ষা রাখে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যেমন ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিয়েছিল, একইভাবে তারা অনেক জায়গায় বাজারও তদারকি করেছিল। তা ছাড়া আগস্টের মাঝামাঝিতে সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মূল্যস্ফীতি কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জরুরি পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কমবে, তবে একটু সময় দিতে হবে; রাতারাতি সম্ভব নয়। তাঁর ঘোষণায় কিছুটা কাজ হয়েছে বটে। কিন্তু এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় আসেনি। মাঝে সবজির দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল। এখন আবার বাড়ছে এবং চাল, ডিমসহ কিছু পণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় সরকারকে তার প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার।
সরকারের অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা এমনকি খোদ প্রধান উপদেষ্টাও অর্থনীতিবিদ। দ্রব্যমূল্য, বাজারের ডাইনামিক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তারা ভালো করেই জানেন। সে জন্য মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ জড়িত। সে জন্য মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারে থাকতেই হবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার সাধারণ সূত্র হলো, বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। অর্থাৎ সংকট যাতে না হয়। সে জন্য কৃত্রিমভাবে কেউ যাতে পণ্য মজুত করে কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা জরুরি।
মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এতদিন সরকারি যেসব পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়েছে, সেগুলো কতটা সঠিক ছিল তা নিয়ে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় যে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। বিষয়টি জুলাই মাসের শুরুতেই তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। সে জন্য ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর নতুন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ১৩ আগস্ট বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হবে। মূল্যস্ফীতি কমানো বিশেষ করে কৃষিপণ্যে ভোক্তা ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে তিনি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর তাগিদ দিয়েছিলেন। এটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে যদি তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। কৃষক যাতে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য না হয় এবং ফড়িয়ারা যেন ৫০ গুণ মুনাফা করতে না পারে, তা নিশ্চিতের কথা বলেছিলেন তিনি। এটা যদি কথার কথা হয়, তবে যেই লাউ সেই কদুই হবে।