এই জটিল ও ক্রসকারেন্টে ভরপুর রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রপঞ্চ নিয়ে চিন্তক সমাজে তেমন কোনো নড়াচড়া নেই। যারা সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং যারা সংবিধান নাড়াচাড়া করে প্রজ্ঞাধিপতি হয়েছেন, তারা বেশ তৎপর। সাধারণত সমাজের সচল চিন্তকদের মধ্যে একধরনের সচেতনতা আছে যা রিঅ্যাকশন হিসেবে আমরা দেখতে পাই। আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, কর্মপরিধির মধ্যে যে কোনো বিষয় সম্পর্কে রয়েছে আমাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া ও অভিজ্ঞান, অভিজ্ঞতা।
এবং আমরা জানি সাংবিধানিক জটিলতার প্যাচগুলো বেশ কন্ট্রাডিকটরি ও রসালো বা পিচ্ছিল। এমন ভাষায় ওই বিষয়টি প্রণেতাগণ লিপিবদ্ধ করেছেন, যাতে সাধারণ শিক্ষিত লোকজন তার ত্রুটি-বিচ্যুতি, ও রচয়িতাদের অভিসন্ধি বুঝতে না পারেন। এবং সেই সব রাজনৈতিক চিন্তার প্যাচ খোলা সহজ নয়। এর কারণ আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষা ঔপনিবেশিক বিধান, রাজনীতিকগণ এই পিচ্ছিল টানেলে নিজেদের জ্ঞানকে ঢুকিয়ে দিয়ে একরকম প্রজ্ঞার ভঙ ধরে বসে আছেন।
আমাদের সংবিধানটিকে এতোকাল মহান বলে জ্ঞান দেয়া হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে এই সংবিধান জনগণের অধিকার দিয়েও তা আবার হরণ করে রেখেছে ৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে। এই রকম হরণের আরো বহু উদাহরণ দিতে পারবেন আমাদের চিন্তাশীল মানুষেরা, যাদের কেউ কেউ এখন সংবিধানটিকে পুনরায় লেখার কথা বলছেন।
গত ৫০ বছর ধরেই কমবেশি সংবিধানের ত্রুটি নিয়ে রাজনীতিকরা কথা বলেছেন। সংবিধানের নাগরিকের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু যারা ক্ষমতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন ( এক তৃতীয়াংশ) থাকার পরও তারা ওই সব ত্রুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেননি। কারণ তাদের ক্ষমতার স্বার্থ। এই অন্ধ স্বার্থপরতাকে কিভাবে আমরা নিঃস্বার্থপরতা দিয়ে উত্তরণের মহাসড়কে নিয়ে আসবো? যারা দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপরে কিছু ভাবতেই শেখেননি, তারা কি তা পারেন বা পারবেন?
এ-কারণে বলেছি সংবিধান এমন কিছু অপকর্ম দিয়ে বিধিবদ্ধ করেছেন সদ্য বিগত হাসিনার স্বৈরাচারি সরকার, যাকে আমরা অপরাধতুল্য বিবেচনা করতে চাই। তারা যা পরিবর্তন পরিবর্ধন, সংযোজন ও সংস্কার করেছেন তা মনে হয় যে কোনো অচিহ্নিত ক্যু-দেতার বিরুদ্ধে কিন্তু আসলে ওই সংস্কার যেন কেউ বাতিল না করতে পারে, তারও ফরমান সেখানে জুড়ে দেয়া হয়েছে, যা মানুষের অধিকারহরণ।
এই রকম কুকর্মে রাজনীতিকদের বিদ্যাবুদ্ধি বেশ প্রখর ও প্রবল। শেখ হাসিনার আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের ক্রিমিনাল ব্রেন কাজ করেছে। তিনি এবং তার প্রশাসনিক অ্যালিগণ ওই সংবিধানের মৌলিকতাত্ব কেবল ধসিয়ে দেননি, জনগণকে বাদ রেখেছেন রাষ্ট্রের অভিভাবকত্ব থেকেও। জনগণে, ভোটার জনগণ যাতে ভোটের ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ না হতে পারে, তাই তাদের সম্মানের লেজটাও কেটেছেন।
ঠিক এই কারণেই বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, এই সংবিধান পুনরায় না লিখলে আর এ দিয়ে কাজ চলবে না। কারণ ওই সংবিধান রাজফরমানের সামিল। আমরা জানি রাষ্ট্রের শিরদাঁড়া, ভিত ও স্থাপত্য সৌন্দর্য় নিহিত আছে বা থাকে ওই সংবিধানের পরতে পরতে। সেই স্থাপত্যকলা ধসিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা, যাতে ২০৪১ সাল পর্য়ন্ত আর কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পঙ্গপালের মতো যা পারে ধ্বংস করে জাতির চিন্তার স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক শক্তি, ও জাতি বিনির্মাণে আকাঙ্খা চিরতরে হারিয়ে ফেলে। কেন তিনি এমনটা করেছেন?