বর্তমানে আরও আশাবাদী অবস্থায় এসে সুন্দর, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন হবে সেটা যখন লিখতে যাচ্ছি, তখন মনে হলো—আচ্ছা সবচেয়ে ভালো মানের সড়ক, সবচেয়ে নিরাপদ গাড়ি, ডিজিটাল সব ব্যবস্থা থাকলেও কি আমরা বলতে পারি যে আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা ভালো বা নিরাপদ? উত্তর হচ্ছে—না।
কারণ, সব ভালো ব্যবস্থা দিনশেষে কাজ করবে না যদি দুটি বিষয় আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই, তার একটি হলো সড়ক ব্যবহারকারীদের শৃঙ্খলা, আর অন্যটি হলো বিশৃঙ্খলা করেও পার পেয়ে যাওয়া। আজ পর্যন্ত শৃঙ্খলা, যানজট, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে হাজারও সুপারিশ, পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে, তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে আমরা পারছি না কেন? এটা কি কোনো রকেট সাইন্স?
এটা কোনো রকেট সাইন্স না। আমরা পারছি না কারণ, টাকা খরচ করে ভালো রাস্তা তৈরি করা যায়, টাকা খরচ করে দামি গাড়ি রাতারাতি কিনে ফেলা যায় কিন্তু টাকা খরচ করেই এই রাস্তা যিনি ব্যবহার করছেন, এই গাড়ি যিনি চালাচ্ছেন তার আচরণ পরিবর্তন করা যায় না। আচরণ পরিবর্তন দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
এক, সড়কে কী করতে হবে, কী করা যাবে না, কেন করা যাবে না, করলে ক্ষতি কী আর না করলে লাভ কী—এসব বিষয়ে জানা। আর দুই নাম্বার হলো, সড়কে গিয়ে সেই জানা বিষয়গুলো ব্যবহারের সুযোগ প্রাপ্তি। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাক।
ধরুন, আমরা আমাদের বাচ্চাদের জেব্রাক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হতে হয় এটা শেখালাম। এখন এই শিক্ষা সে অল্প কিছুদিন পরেই ভুলে যাবে দুটি কারণে। এক, যদি সে রাস্তায় গিয়ে জেব্রাক্রসিং বা ফুটওভার ব্রিজ না দেখে আর দুই, যদি এসব থাকার পরেও কোনো বাঁধা ছাড়াই অন্যদের রাস্তা পার হতে দেখে। তাহলে আমাদের একদিকে জানাতে হবে তেমনি অন্যদিকে প্রয়োগের ব্যবস্থা করে বাধ্য করতে হবে।
সড়কের শৃঙ্খলার জন্য দুই ধরনের ব্যবহারকারীদের গুরুত্ব দিতে হবে। এক, পথচারী আর দুই, হলো চালক। যাত্রীর কথা বলছি না কারণ যানবাহনের ওঠার আগ পর্যন্ত সে কিন্তু পথচারী থাকে। পথচারীরা মূলত দুইভাবে সড়ক ব্যবহার করে যেমন সড়কের বরাবর হাঁটা এবং সড়ক পারাপার হওয়া। অন্যদিকে পথচারীরা আবার দুইভাবে সড়কের আচরণ ভঙ্গ করে, একটা হলো ইচ্ছাকৃত আরেকটা অনিচ্ছাকৃত।
বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাক। একজন পথচারী যখন রাস্তা বরাবর হাঁটে তখন তার জন্য প্রয়োজন ফুটপাত। এখন এই ফুটপাত তিনি দুটি কারণে ব্যবহার করতে পারেন না, এক হলো ফুটপাতে হকার, দোকানের মালামাল ইত্যাদি থাকা আর দ্বিতীয়টি হলো, ফুটপাতের কন্টিনিউশন না থাকা। কিছুক্ষণ পর পর ফুটপাত কাটা বা ড্রপ থাকলে পথচারীকে বারবার ওঠা-নামা করতে হয় যা মহিলা, শিশু, বয়স্ক, মাথায় বা হাতে বোঝা নিয়ে চলমান পথচারীদের জন্য সমস্যা। এর ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একজন সচেতন নাগরিককে ফুটপাত বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে হয় হাঁটার জন্য।