জানাই ছিল, সব প্রকল্পের উদ্দেশ্য হবে ব্যর্থ; তবু কোটি কোটি টাকা হরিলুটের আয়োজন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের ধুয়া তুলে আওয়ামী লীগ সরকার গেল সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় টাকা নয়ছয় করেছে হেসেখেলে। আমদানি করেও গ্যাস সংকট যেখানে বাগে আসছিল না, সেখানে খুলনা-যশোর অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে নেওয়া হয় গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য ‘আমুদে প্রকল্প’। গ্যাসের খবর নেই, এর আগেই বিপুল উৎসাহে খুলনায় হাজার হাজার কোটি টাকায় দাঁড় করানো হয় তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলই নয়, গ্যাস প্রকল্প হাতে নিয়ে উত্তরের মানুষকেও দেখানো হয় অলীক স্বপ্ন। প্রকল্পের টাকা লুটেপুটে উত্তরের সেই গ্যাসের গল্পও একসময় হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। এমনকি গ্যাস পাওয়া যাবে না– নিশ্চিত জেনেও প্রকল্প বানিয়ে অগভীর সমুদ্রে করা হয় অযৌক্তিক কূপ খনন।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচা করে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার। অভিযোগ আছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ বিধানের সুযোগ নিয়ে এসব প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ দেওয়া হয়েছে দরপত্র ছাড়াই। কখনও ভোটের রাজনীতি চাঙ্গা রাখতে, কখনও লুটপাট করতে, আবার কখনও বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী, আমলা ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী মিলেমিশেই এসব অপকর্মে নামেন।
যেমন খুলনা-যশোর অঞ্চলে গ্যাস দিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচায় নির্মাণ করা হয়েছিল সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো। পরে গ্যাস সংকটের মুখে ওই প্রকল্প বাতিল করে সরকার। এ বিপুল বিনিয়োগ এখন পড়ে আছে মাটির নিচে। ঋণ করে নেওয়া এই টাকার ঘানি টানছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিন কমছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪২০ কোটি ঘনফুট। আমদানিসহ গড়ে মিলছে ৩০০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে যেখানে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে, সেখানে অনেক অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করেই যাচ্ছিল আওয়ামী লীগ সরকার।