ধরেই বেঁধে ফেলা হতো হাত ও চোখ। মুখমণ্ডল ঢেকে দিতে পরানো হতো টুপি। নিয়ে যাওয়া হতো গোপন বন্দিশালায়। জানালাবিহীন ছোট্ট কক্ষটিতে সার্বক্ষণিক উচ্চ আলোর বাতি জ্বলে। রাত–দিন বোঝার উপায় নেই। কখনো কখনো বাতি বন্ধ করে দিত, তখন নেমে আসত ঘুটঘুটে অন্ধকার। এগজস্ট ফ্যানের বিকট শব্দের কারণে শোনা যেত না বাইরের কোনো শব্দ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ও পরে গোপন বন্দিশালা থেকে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের কয়েকজন বন্দিশালার এমন চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন, ওই অজ্ঞাত বন্দিশালায় বেঁচে থাকাটাও ছিল দুঃসহ যন্ত্রণার। সারাক্ষণ মৃত্যুর প্রহর গুনতে হতো, এই বুঝি বের করে নিয়ে গেল।
একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তুলে নেওয়ার পরপর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হতো। কাউকে কাউকে মাঝেমধ্যে নিয়ে যেত নির্যাতনকক্ষে (টর্চার সেল)। চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরা অবস্থায় শৌচাগারে আনা-নেওয়ার পথে নির্যাতনের শিকার অন্যদের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত।
গুমসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে, এমন সূত্রগুলো বলছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হতো, তাঁদের এমন গোপন বন্দিশালায় রাখা হতো। আবার তুলে নেওয়ার পরপর বা অল্প দিনের মধ্যে মেরে ফেলা হয়েছে। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় দেখা গেছে, তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের মুখমণ্ডলে পলিথিন পেঁচিয়ে রেখে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর পেট কেটে মৃতদেহের সঙ্গে সিমেন্ট বা ভারী বস্তু বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আবার কাউকে কাউকে লম্বা সময় পরে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কারও কারও লাশ উদ্ধার হয়। কারও লাশও পাওয়া যায়নি।