উচ্চশিক্ষাকাঙ্ক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়-ব্যবস্থার নয়া ইশতেহার

প্রথম আলো সৌমিত জয়দ্বীপ প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও উন্নয়নবাদের মোড়কে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি একটি আসমুদ্রহিমাচল আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। এ জন্যই একে বলা হচ্ছে ‘উচ্চশিক্ষাকাঙ্ক্ষা’। আকাঙ্ক্ষা থাকা উপাদেয়। তবে ভৌত ‘বিশ্ববিদ্যালয়বাজি’র কারসাজিতে দাঁড়ানো বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার চরিত্রটি বাজারকেন্দ্রিক হওয়ায় তা সহজলভ্যতার নেশায় মত্ত অপরিকল্পনা ও অনুৎপাদনশীলতার আস্ফালনমাত্র।


টাকা প্রয়োজনের অধিক ছাপানো যেমন মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়, তেমনই টেকসই উচ্চশিক্ষার দর্শনহীনতার বদলে যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুললে তা ‘উচ্চশিক্ষাস্ফীতি’ এবং একই সঙ্গে ‘বেকারস্ফীতি’ তৈরি করে। এতে অতি-উৎপাদনে মুদ্রার মতো উচ্চশিক্ষারও মান কমে। উচ্চশিক্ষাকে টেকসই করার লক্ষ্যেই চলমান আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য কী এবং কীভাবে ও কার জন্য এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে।

এরপর আসবে উচ্চতর শিক্ষার প্রসঙ্গ। অপ্রিয় হলেও সত্য, উচ্চতর শিক্ষার সর্বজনীনতা বাঞ্ছনীয় নয়। বরং একজন নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য ও প্রয়োজনীয় টেকসই উচ্চশিক্ষার বন্দোবস্তের মাধ্যমে তাঁকে বাজারব্যবস্থার অংশীদারত্ব দিতে হবে। বাজারের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে এসে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারার এটাই বোধ হয় সবচেয়ে উত্তম ‘বটিকা’। সেই ভাবনা থেকেই এ ইশতেহারের প্রস্তাব।


না, এ প্রস্তাব অলৌকিক আকাশকুসুম কল্পনা নয়। এর বাস্তব অস্তিত্ব খোদ বাংলাদেশেই আছে। উদাহরণ চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সশস্ত্র বাহিনীর শিক্ষাকাঠামো।



চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সশস্ত্র বাহিনীর শিক্ষাকাঠামো


উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শীর্ষ মেধাবীদের বৃহদাংশের স্বপ্ন থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নের। এই মেধাবীরা পড়েন মহাবিদ্যালয় তথা কলেজে, যেগুলো কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।


সশস্ত্র বাহিনীতে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে চাকরির পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আছে। যেমন সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে একজন অফিসার লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পান। এই স্নাতক সমপর্যায়ের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াটির আনুষ্ঠানিক তকমা ‘প্রশিক্ষণ’।


হায়, বাংলাদেশে শীর্ষ মেধাবীরা অধিভুক্ত কলেজে পড়েন! হায়, স্নাতক পর্যায়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাগ্রহণ কি না প্রশিক্ষণ! বাংলাদেশে মহাবিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক শিক্ষাকে যেভাবে ব্রাত্যজ্ঞান করে একই দেশে দুই নীতির উচ্চশিক্ষা প্রচলিত আছে, সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ দুটি উদাহরণই সম্ভবত যথেষ্ট।


তাহলে কি কলেজেই হবে উচ্চশিক্ষা


সারা দুনিয়ায় কলেজিয়েট পদ্ধতির উচ্চশিক্ষা বেশ সম্মানজনক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা এত সরল মনে সম্মানের পথ খুঁজব না। এ ব্যাপারে সমাধান খুঁজতে আমাদের বরাবর সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-ব্যবস্থাকে, যেটির মুখোশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও মুখটি কলেজিয়েট-ব্যবস্থার।


মোটাদাগে এ ব্যবস্থায় গবেষণার অবস্থা তথৈবচ, বিভাগ-বিভাজিত বিশেষায়িত পঠনপাঠন বাজারের চাপে নতজানু এবং চাকরিপন্থী ধারার একাধিপত্যে যুযুধান জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারাটি মুমূর্ষু ও পরাভূত। জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারাটির প্রকৃত মূল্যায়নে মনোযোগ দিতে হবে গবেষণায় এবং অনিবার্যভাবেই মহাবিদ্যালয়রূপী বিশ্ববিদ্যালয়-কাঠামো ভেঙে গড়তে হবে উচ্চতর শিক্ষার প্রকৃত গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়।



জাতীয় গবেষণা ও সনদদাতা বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশে ন্যূনতম একটি স্বতন্ত্র গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার বিষয়টি নিয়ে তেমন বিদ্যায়তনিক উচ্চবাচ্য নেই। এর সকরুণ কারণও আছে। ঔপনিবেশিক মনোজগতের প্রকৃষ্ট উত্তরসূরি হিসেবেই বাজারব্যবস্থার চাপে-তাপে-উত্তাপে উচ্চবিদ্যাপীঠের স্নাতকদের মধ্যে চাকরিপন্থী, বিশেষত সরকারি চাকরিপন্থী ধারাটি এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক আধিপত্যবাদী।


শিক্ষার্থীদের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান-উদ্দেশ্য চাকরিপন্থী হয়ে উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শিক কাঠামো যে সংকটাপন্ন হয়, তা সম্ভবত বিবিধ রাজনৈতিক সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত বাংলাদেশিরা খুব কমই ঠাওর করতে পেরেছেন। চলমান পাঠন ও গবেষণাকাঠামোর বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় গবেষণা-সংক্রান্ত সংকট তাই আরও গভীরে নিপতিত হয়েছে।


বাংলাদেশে গবেষণা হয় মুখ্যত (পিএইচডি, এমফিল বা গবেষণাপত্র লেখা) পদোন্নতির আশায়। ফলে নতুন কী জ্ঞান উৎপাদিত হলো, তার জবাব খোদ গবেষকের কাছেই নেই! তথৈবচ মানহীন পিএইচডিতে জেরবার আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দুনিয়া। বহুজনের ‘গবেষকজীবন’ পিএইচডির পরেই অস্ত যায়।


গণ-‘উচ্চশিক্ষাকাঙ্ক্ষা’ যেমন প্রবল, তেমনই নামের ভূষণ ও অলংকার বাড়ানোর প্রকল্প হিসেবে পিএইচডি তথা উচ্চতর শিক্ষা লাভের আকাঙ্ক্ষাও দুর্বার! আদতে গবেষণা যা-ই হোক, লেবাসটা পরা চাই। ব্যবস্থার দুর্বৃত্তায়ন হলে একটি মহৎ একাডেমিক ডিগ্রিও তার জিম্মি হয়ে ওঠে। খোলা চোখে গবেষণা থাকলেও আদতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুসন্ধিৎসু গবেষণা নেই। স্বতন্ত্র গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় তাই সময়েরই দাবি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us