ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে চারদিকে। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় পারুল বেগমের ঘরের ভেতর তখন হাঁটুপানি। পাশের দোতলা বাড়িতে তাঁর দেবর থাকেন। সেখানেই রাতে থাকার ব্যবস্থা। পারুল ভাবলেন, ওষুধগুলো সঙ্গে নিয়ে যাবেন। অল্প অল্প করে পানি উঠছিল বাড়িতে। আলমারির ওপর ওষুধের বাক্স। চেয়ারে উঠে সেটা হাতে নিতেই গলাসমান পানি ঢুকে গেল ঘরে। পারুল বেগমের বড় ছেলে কোনোমতে তাঁকে কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
এভাবেই বন্যার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন পারুল বেগম। বলছিলেন, বিয়ের পর ফেনীতে এসে গত ৩০ বছরে এমন বন্যা দেখেননি তিনি। বড়জোর বাড়ির উঠান পর্যন্ত পানি দেখেছিলেন। পানির তীব্র স্রোত আর প্রতি মুহূর্তে বেড়ে চলা পানির ভয়াবহতা কখনো নিজের চোখে দেখতে হবে, সেটা তিনি কল্পনাও করেননি। পানির নিচে চলে গেছে তাঁদের বাড়ি। শুকনা খাবার আর বাড়িতে থাকা চাল-ডাল দিয়ে ছয় দিন পার করেছেন। সেই খাবারও প্রায় শেষের দিকে। খাবারের কষ্ট আর বসতবাড়ির ডুবে যাওয়া চিত্র তাঁকে দেখতে হয়েছে চোখের সামনে। পানি নেমে গেলে যে দৃশ্য দেখতে হবে, তা ভেবেও কূলকিনারা পাচ্ছেন না পারুল। বলছিলেন, ‘মনে তো হয় না আর কিছু বাকি আছে। পানি নামি গেলে বোঝা যাবে, কী আছে আর কী নাই।’
এখন ধীরে ধীরে কমতে থাকা পানির দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন পারুল বেগমের মতো অসংখ্য নারী। এই নারীদের প্রায় কেউ কেউ বন্যা দেখলেও ঘরে গলাসমান পানি দেখেননি অতীতে। দেখেননি বানের পানির এমন প্রবল স্রোত। চোখের সামনে ডুবতে থাকা নিজের ঘর, ভিটা, পুকুর কিংবা খেত-খামার দেখা হয়নি। ফলে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাঁদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।