পানিবৈষম্য ও বন্যার্তদের কান্না থামবে কখন?

যুগান্তর ড. মো. ফখরুল ইসলাম প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৪

২১ আগস্ট গভীর রাতে রাস্তা থেকে হঠাৎ শোরগোল ভেসে আসতে থাকল। তার সঙ্গে এলাকার নাইটগার্ডদের হুইসেলও শোনা যাচ্ছিল। ভাবলাম রাতে দলবেঁধে পাহারারত পাড়ার ছেলেরা মিলে হয়তো চোর-ডাকাত কাউকে ধরে ফেলেছে। কৌতূহলবশত পড়াশোনা বন্ধ করে বারান্দায় গিয়ে শব্দগুলোর অর্থ অনুধাবন করার চেষ্টা করলাম। পরক্ষণেই বুঝলাম, এগুলো কোনো মিছিলের সাধারণ শব্দ বা গৎবাঁধা দাবির আর্জি নয়। বিশেষ কোনো দাবি আদায়ের জন্য সমস্বরে হুংকার দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল। গভীর রাতে ছাদ থেকে দেখা অবিশ্বাস্য সাহসীদের হঠাৎ এত লম্বা মিছিল চোখে পড়েনি। পরে জানা গেল, ভারতের একতরফা বাঁধ খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে এ মিছিল।


পরদিন টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আগাম সতর্ক না করে বাঁধের গেট খুলে দেওয়া অমানবিক হয়েছে।’ রাতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে হুহু করে ঢুকে পড়া বন্যার পানিতে হঠাৎ ডুবে যাওয়া মানুষের কান্নার আওয়াজ কোটি শিক্ষার্থী-জনতার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল সবাই। বিগত বহু বছর ধরে তিস্তা, ফারাক্কা, টিপাইমুখ ইত্যাদি বাঁধের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের প্রবঞ্চিত মানুষ আর কোনো প্রবঞ্চনার শিকার হতে চায় না। তাই তারা রাতের আঁধারে গর্জে উঠতে দেরি করেনি।



প্রতিবেশী দেশের কর্তৃপক্ষ কালবিলম্ব না করে তার পরদিনই জানিয়ে দিয়েছে, তারা ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধ খুলে দেয়নি। পানির চাপ বেশি হওয়ায় বাঁধের কপাট নিজে থেকেই খুলে গেছে! এ ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই করার সময় তখন ছিল না। জি-নিউজ, স্ক্রল ডটকমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, ২১ আগস্ট সকাল ৮.৩৫ মিনিটে ত্রিপুরার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের বাঁধের কপাট খুলে দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালে নির্মিত পুরোনো এ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির ধারণক্ষমতার বেশি পানি জমা হওয়ায় ধসে পড়ার আশঙ্কায় বিপৎসংকেত না জানিয়ে হঠাৎ করে গেট খুলে দেওয়া হয়; কিন্তু ভারতীয় সরকারি গণমাধ্যমে গেট খুলে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।


ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম এলাকার চলতি বন্যার বৈশিষ্ট্য হলো, হঠাৎ প্রবল স্রোতের তোড়ে সবকিছু ডুবিয়ে-ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে প্রবল এ স্রোতের গতি বলে দিচ্ছে, এগুলো ড্যামের গেট খুলে দেওয়া অগাধ পানি। কারণ, উজানে গত এক সপ্তাহে এত বেশি পরিমাণ বৃষ্টির পানির রেকর্ড নেই! ডম্বুর বাঁধের ছেড়ে দেওয়া পানি এ আকস্মিক বন্যার মূল কারণ। এ মনুষ্যসৃষ্ট বন্যাকে অনেক বিশেষজ্ঞও সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করেছেন।


বাস্তবতা হলো, বন্যায় দেশের ১২ জেলার মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার, ফসলি মাঠ, মাছের পুকুর গভীর পানির নিচে ডুবে গেছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে গোটা বন্যাক্রান্ত এলাকা। সারা দেশের সঙ্গে যোগাযাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় উদ্ধারকারী দল দ্রুত সেখানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। ঢলের পানির তোড়ের আকস্মিকতায় হতভম্ব মানুষ যে যেটা পারেন, হাতে নিয়েও ঘরের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারেননি। কারণ, চারদিকে শুধু পানি আর পানি। জীবনের নিরাপত্তার জন্য শুকনো জায়গা খুঁজে না পেয়ে অনেকে শুধু কান্নাকাটি করছিলেন। আশপাশের স্কুল, কলেজ ভবন ও বহুতল পাকা বাড়ি হাতেগোনা। সেগুলোর নিচতলা জলমগ্ন। উপরে বা ছাদে এত বন্যাক্রান্ত মানুষের ঠাঁই দেওয়া যাচ্ছে না। তাদের কান্না শোনার মতো দরদি কেউ সেখানে ছিল না।



এতটা আতঙ্কাবস্থা তৈরি হয়েছে, ৩০ ঘণ্টা পরেও এসব জায়গায় হুহু করে পানি ঢোকা অব্যাহত ছিল। ফেনীর দাগনভূঁইয়া, ছাগলনাইয়া, কুমিল্লার বুড়িচং, চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকার সব জায়গায় শুধু থইথই পানি। এসব এলাকায় গ্রাম, শহর, নগর, পুকুর, মাঠ আলাদা করে চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। কিছু কিছু জায়গায় সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার সাহায্যকারীরা উদ্ধার কাজ শুরু করেছেন। তবে কোথাও কোথাও রাতে হেলিকপ্টার দিয়ে শুকনো খাবার ছুড়ে দিয়ে এবং পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করতে দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কেন্দ্র বানিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করার ব্যবস্থা হয়েছে এবং সেগুলো উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত পাঠানো শুরু হয়েছে।


কথা হলো, এ বন্যার দায় কার? এ বছরের শুরু থেকে মাত্র আট মাসে সিলেট বিভাগে সাতবার বন্যা হয়েছে। তিস্তা এলাকায় গত বছর আটবার বন্যা হয়েছে। সেখানে গেল চৈত্র মাসেও প্রবল ফ্লাশ-ফ্লাড হয়ে মানুষের আলু, গম, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, চিনাবাদামসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিস্তাপারের দরিদ্র কৃষকের আরও হতদরিদ্র বানানোর জন্য দায়ী এসব ফ্লাশ-ফ্লাড। এর দায় ও দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকের ঋণের বোঝা শোধ করার দায়ই বা কে নিতে এগিয়ে আসবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us