প্রবল বন্যায় ডুবে গেছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো—ফেনী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়িতে বন্যার প্রকোপটা বেশি। ২৩ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ফেনীতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র ফুটে ওঠে। জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় উদ্ধারকর্মী বা ত্রাণকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছাতে পারেনি।
বিস্তীর্ণ এলাকা সম্পূর্ণ জলে ডুবে আছে। তিন চারদিন ধরে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ঢাকা ও দেশের বিচ্ছিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই ফেনীতে গিয়ে ভিড় করেছে, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই তাদের, পরিবারের সদস্যরা কোন অবস্থায় আছে, বেঁচে আছে কিনা সেটাও কেউ জানে না।
বাংলাদেশে মোট এগারোটি জেলায় প্রায় পঁয়তাল্লিশ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। বন্যার উৎপত্তিটা যেহেতু ভারতের ত্রিপুরা থেকে হয়েছে এজন্যে ত্রিপুরার ভাটির জেলাগুলো, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। ২৩ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে এই পর্যন্ত ১৫ জন মানুষের মতো মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। বিস্তারিত জানা যাবে পানি নেমে যাওয়ার পর।
বন্যায় আক্রান্ত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও রাজ্যের কয়েকটি জেলা জলে ডুবে গেছে। ২৩ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ত্রিপুরায় মৃতের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। ফায়ার ব্রিগেড, পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এরা উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এদের সাথে যোগ দিয়েছে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থীরা।
স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে বন্যা আক্রান্ত জায়গাগুলোয়। এছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশে ত্রাণ সংগ্রহ করে আক্রান্ত এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা। জলে নিমগ্ন দূরবর্তী এলাকাগুলো থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্যে নৌকা, স্পিডবোট ইত্যাদি নিয়ে হাজির হচ্ছে মানুষ।
বাংলাদেশের মানুষ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং এই ধরনের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। এই ধরনের বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে। সবসময় আমরা যেসব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে নানা দলে বিভক্ত থাকি, ঝগড়াঝাঁটি করি, দেখা যায় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেইসব যেন মানুষ ভুলে যায়। এবারের বন্যায়ও তাই হয়েছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং সেই সাথে সমাজের সব অংশের মধ্যে একদিকে যেমন একটা দৃঢ় ঐক্যের তৈরি হয়েছে সেই সাথে আবার সদ্য সাবেক সরকারি দলের সমর্থক ও অন্যদের মধ্যে বৈরিতার বহিঃপ্রকাশও নানা জায়গায় নানাভাবে দেখা যাচ্ছে। বন্যার শুরুতেই সেসব বিরোধও যেন মানুষ ভুলে গেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার করার চেষ্টা করছে সবাই।
দুইটা কথা আলোচনায় এসেছে বন্যা শুরুর পর থেকেই। প্রথম কথাটি হচ্ছে যে এইরকম তীব্রতা নিয়ে বন্যা আমাদের দেশে এর আগে আর কখনো হয়েছে কিনা। আরেকটি কথা হচ্ছে, এই বন্যাটি কি ভারতের কারণে ঘটেছে?
দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যেও অনেককেই বলতে দেখা গেছে যে, ভারত বাংলাদেশকে না জানিয়ে বিনা নোটিশে ত্রিপুরার একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ায় আমাদের দেশে আকস্মিক এই বন্যাটা হয়েছে।