বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর যে আলোচনা সামনে আসছে সেটি হচ্ছে, এই সরকারের মেয়াদ কতদিন থাকবে।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সরকারের মেয়াদ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার জন্য যতদিন থাকার দরকার হবে, অন্তর্বর্তী সরকার ততদিন থাকবে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যখন ওনাদের মনে হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে তখন ওনারা নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন। তার আগে এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যাবে না’।
আপাতত মেয়াদের বিতর্কে না গিয়ে আমাদের এই আলোচনাতে আশা উচিত যে বর্তমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
বাংলাদেশে স্থিতাবস্থা ও সর্বজনীন সমঅধিকার ফিরিয়ে আনতে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যাপক কৌশল গ্রহণ করতে হবে যা সাম্প্রতিক অস্থিরতার মূল কারণগুলো মোকাবিলা করবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে। বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপ নিতে পারে সেক্ষেত্রে আমার মতামত তুলে ধরছি—
রাজনৈতিক পুনর্মিলন এবং জাতীয় সংলাপ
রাজনৈতিক বিভাজন নিরাময় করা এবং বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করাই হবে সরকারের মূল উদ্দেশ্য। সরকারের উচিত অবিলম্বে সব প্রধান রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ছাত্র নেতা এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংলাপ আহ্বান করা। এই সংলাপে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি রাজনৈতিক রোডম্যাপ তৈরির দিকে নজর দেওয়া উচিত। আলোচনায় আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং অন্যান্য দলগুলোর মতামত প্রাধান্য দিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। সব ধরনের রাজনৈতিক জিঘাংসার বাইরে গিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ গুরুত্ব দেওয়ার সাথে সাথে ক্রান্তিকালে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখার মাধ্যমে, পক্ষপাতিত্ব বা কারচুপির অভিযোগ রোধ করে আসন্ন নির্বাচনের জন্য সমতল ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার
দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা এবং আরও সহিংসতা প্রতিরোধ করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া অন্যতম গুরুদায়িত্ব। অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা অপব্যবহারের তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুম সংক্রান্ত। সবক্ষেত্রে আইনের সুশাসন এবং মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যাতে আইন প্রয়োগকারী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করা যায়। পুলিশের উচিত জনগণকে রক্ষা করার জন্য কাজ করা, দমন করা নয়, যা উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।