সংস্কারে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

যুগান্তর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১৮

জাগ্রত শিক্ষার্থীসমাজ ও দেশপ্রেমিক জনতার রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করেছে। এ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পচে যাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং সংবিধান সংশোধন করে সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসনের সূচনা করা; যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকার স্বৈরাচারী হতে না পারে। ভোটের অধিকার ও সরকারের দায়িত্বশীলতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সামনে কাজ অনেক।


কারণ, দীর্ঘদিনের অপশাসনে প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নাগরিক হয়রানি ও দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব কাজ একত্রে এ সরকারের পক্ষে স্বল্প লোকবল নিয়ে দ্রুত করা সম্ভব নয়। আবার খুব বেশি সময় নেওয়াও অনভিপ্রেত। কারণ, বেশি সময় নিলে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার গণতান্ত্রিক দাবি তুলে রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শোরগোল ওঠাবে। এ জন্য সরকারকে কাজের অগ্রাধিকার বিবেচনা করতে হবে। স্বল্প সময়ে করা সম্ভব এমন কিছু কাজ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করতে হবে। আর বড় এবং সময়সাপেক্ষ কাজগুলো করার জন্য, যেমন সংবিধান সংস্কারের জন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের একটি খসড়া তৈরি করতে পারে। এমন সংস্কার পাশ করতে সংসদের প্রয়োজন হবে।



এ লক্ষ্যে সরকারের উচিত হবে ডামি মার্কা নির্বাচন করা তথাকথিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক ও লুকোচুরি প্রক্রিয়ায় গঠিত ইসি পুনর্গঠন করে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। এমন নির্বাচনে রায়প্রাপ্ত সরকার সংসদে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরিকৃত গণমুখী সংবিধান পাশ করবে। তারপর নবগঠিত সরকারের কাজ হবে সমাজ ও দেশের কল্যাণে গণতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করা। সংস্কারের জন্য অগ্রাধিকার বিবেচনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে পারে। কারণ, শিক্ষা বিবেচিত হয় জাতির মেরুদণ্ড হিসাবে। সেজন্য এ প্রবন্ধে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করব।


বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১২ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার (এলিমেন্টারি এডুকেশন) ব্যবস্থা করা ভালো। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদদের নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নতুনভাবে সাজানো দরকার, যাতে এক-দুই বছর পরপর পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের ওপর গিনিপিগ এক্সপেরিমেন্ট করতে না হয়। বারবার যেন টেক্সট বই পরিবর্তন করা না লাগে। পাঠ্যক্রমে এমন বিষয়বস্তু যেন অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, যা ধর্মীয় বা দেশজ মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে আহত করে। ইংরেজি মাধ্যম ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল কারিকুলাম পড়ানো স্কুলগুলোর জন্য পৃথক নীতিমালা করা প্রয়োজন। নিচের দিকে নার্সারি থেকে শুরু করে প্রাথমিক ৩-৪ ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যক্রমে লেখাপড়ার চাপ কমিয়ে বিভিন্ন রকম বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি অধিকতর আগ্রহী করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।



স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার সব স্তরে যুগপৎ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য সাংঘর্ষিক দলীয় রাজনীতির চর্চা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা জরুরি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সংগঠন থাকতে পারবে, যেগুলো একাডেমিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বার্গেনিং এজেন্ট হিসাবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করবে। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর সরাসরি দলীয় রাজনীতি করাকে বাধা দেওয়া হবে না। তবে সেক্ষেত্রে তাকে শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে বা অন্য কোনো দলে যোগ দিয়ে রাজনীতি করতে হবে। ক্যাম্পাসের একাডেমিক পরিবেশের মধ্যে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করে ধাওয়া-পালটাধাওয়া, মনোনয়ন বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি এবং দখলদারত্ব সংস্কৃতির চর্চা করা যাবে না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একাডেমিক প্রতিষ্ঠান। এগুলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়। দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির মধ্য দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না। তবে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই রাজনীতিসচেতন থাকবেন এবং দেশের প্রয়োজনে সময়োচিত ভূমিকা পালন করবেন। স্বাভাবিক সময়ে তাদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া জরুরি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা নিশ্চয়ই উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাসগুলোকে রাজনৈতিক নেতা তৈরির ফ্যাক্টরি বানাতে চাইবেন না। এ জন্য প্রয়োজনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ/আইন যুগোপযোগী করতে হবে।


স্মর্তব্য, গণতান্ত্রিক বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষকদের সংগঠন থাকলেও তাদের ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরে না। লাশ পড়ে না। গেস্টরুম, গণরুম, ফাউ খাওয়া, টর্চার সেল গড়ে ওঠে না। সেখানে মনোনয়ন বাণিজ্য নেই। শিক্ষার্থীরা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেন না। এসব না করেও তারা যদি মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট হতে পারেন, তাহলে আমরা কেন একাডেমিক পরিবেশ নষ্ট করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নেতা তৈরির কারখানা বানাতে অনুমোদন দেব? ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি না করায় ইউরোপ-আমেরিকার পার্লামেন্টে কি কখনো মানসম্পন্ন নেতার অভাব হয়েছে? আর আমাদের দেশে কি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ‘ছাত্র ব্যবসা’ করে মানসম্পন্ন নেতা তৈরি হচ্ছে? বিরাজমান বাস্তবতা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা এখানে রাজনীতি করছেন আর্থিক মুনাফা অর্জন ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ার অভিপ্রায়ে।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us