পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন ‘আর নৈরাজ্য সৃষ্টি মানুষ হত্যা অপেক্ষা ঘোরতর অপরাধ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯১) আরো উল্লেখ রয়েছে ‘আর পৃথিবীতে তুমি অশান্তি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৭)
সমাজে ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী সবাই মিলেমিশে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করার শিক্ষাই ইসলাম আমাদের দিয়েছে।
ইসলাম হচ্ছে হীরক সদৃশ স্বচ্ছ সুন্দর এক শান্তি। যে কোনো আঙ্গিক থেকেই এটাকে দেখা হোক না কেন, এটা হচ্ছে অবিমিশ্র শান্তি, খাঁটি শান্তি এবং শান্তি ভিন্ন আর কিছুই নয়। ধর্মের সার্বিক ইতিহাসে প্রথমবারের মত ইসলামের যথার্থ নামটিই হচ্ছে অনুপম, ধর্মটির এমন একটি নাম দেয়া হয়েছে, আক্ষরিকভাবেই যার অর্থ হচ্ছে ‘শান্তি’। এর আরেকটি অর্থও রয়েছে, যা হচ্ছে, খোদার ইচ্ছা ও আদেশের ওপর পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। যে ব্যক্তি প্রকৃত অর্থেই ইসলামে বিশ্বাস করে, তাকে মুসলমান বলে। খাঁটি-মুসলমানের একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দান করেছেন মহানবি হজরত মোহাম্মদ (সা.)।
তিনি (সা.) বলেছেন, ‘যার হাত এবং জিহ্বা থেকে সব মানুষ নিরাপদ থাকে সেই প্রকৃত মুসলমান’ (সুনান নিসাই, ৮ম খণ্ড, কিতাবুল ইমান)।
ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীময় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং পবিত্র নবি মোহাম্মদ (সা.) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তির বাণী বিস্তারকারী। ইসলাম যে প্রকৃতপক্ষেই ‘শান্তির বার্তাবাহক, ঘৃণা, সন্ত্রাস, হিংস্রতা অথবা রক্তপাতের বার্তা হবার-চাইতে বহু যোজন দূরে, তা বুঝতে পবিত্র কোরআন আমাদেরকে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন সর্বপ্রথম এ জোরালো বিবৃতি দান করে যে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬)।
এ আয়াত স্পষ্টভাবে এ ঘোষণা দেয় যে, সমগ্রবিশ্বের সকল মানুষই তাদের নিজ ধর্ম-পছন্দ করতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা যে ধর্মই পছন্দ করবে, যে ধর্মের আজ্ঞানুবর্তী হয়ে তারা সুখী হবে, সেধর্মই তারা প্রতিপালন করবে। পৃথিবীর বুকে এমন ব্যক্তি নেই, যে কোনোভাবে কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করবে অথবা সেজন্য শক্তি প্রয়োগ করবে। পবিত্র কুরআনই এ ঘোষণা দেয় যে, বিশ্বাসের স্বাধীনতা হচ্ছে সব মানুষের মৌলিক অধিকার। পছন্দমাফিক যেকোনো ধর্মেই তারা বিশ্বাসস্থাপন করতে পারে এবং তাদের পছন্দ মোতাবেক তারা যে কোন ধর্মেরই আজ্ঞাবাহী সদস্য হতে পারে।
পবিত্র কুরআন এই ঘোষণা করে, ‘এবং বল, এটা হচ্ছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে আগত সত্য, সে কারণে যে চায়, এতে বিশ্বাস করুক এবং যে চায়, অবিশ্বাস করুক’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ২৯)।