কলবেল শুনলেই ভেতরের ঘর থেকে দৌড়ে আসে ও। এক হাতে লাঠি, আরেক হাতে পেপার স্প্রে। ভয়ার্ত চেহারায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে নিরাপদ স্থানে। ভেতরে অপরিচিত কেউ ঢুকলেই যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে। রাতে ডাকাত পড়েছে শুনে বাকিরা যখন লাফ দিয়ে দাঁড়াচ্ছি, সে–ও ভয়ে উঠে পড়ছে। আমার ৯ বছরের ছেলের গত কয়েকটা দিন এভাবেই গেছে। টেলিভিশন, পত্রিকা, ইউটিউব—সবখানেই বাংলাদেশের কথা। শুরুতে আমরা চেষ্টা করেছিলাম ওর সামনে অনেক কথা না বলতে, যতটা সম্ভব সহিংসতার দৃশ্যগুলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। কিন্তু গলিতে, বাসার সামনেই যখন গাড়িতে আগুন দিল, সেটা ওর চোখেও ধরা পড়েছে। গত কয়েক দিন ঢাকা এবং তার আশপাশের ঘটনায় কমবেশি সবার মধ্যেই আতঙ্ক। বড়দের সেই অস্থিতিশীল মানসিক অবস্থা শিশুদেরও ছুঁয়ে গেছে। এখনো বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে অনেক শিশু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভয় হয়তো তার কেটে যাবে। মাঝের সময়টা যতটা সম্ভব ওদের রাখতে হবে শান্ত, দিতে হবে নিরাপত্তার বোধ।
অনেক শিশু যেমন এই সময় ভয় পেয়ে চুপ করে ছিল। অনেকে আবার আতঙ্ক থেকেই জেদি হয়ে গেছে। ব্যবহারে চলে এসেছে নেতিবাচক প্রবণতা। ১০ থেকে ১৮ বছরের ছেলেমেয়েরা কিশোর-কিশোরী। ওদের অনেকেরই নামে–বেনামে আছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। পত্রিকা, টেলিভিশনে অনেক সহিংসতার বিকৃত রূপ দেখানো হয় না। যেটা ফেসবুকে চলে আসে। অনেক মা–বাবা ভাবছেন বড় হয়ে গেছে, আশপাশে কী ঘটছে, তাদেরও সেটা জানা উচিত। এই তথ্যগুলোই পরে ওদের ভিতু বা নিষ্ঠুর করে তোলে। ঘটনা যখন ঘটে যায়, তখন একরকমভাবে সামলাতে হয়। ঘটনা–পরবর্তী সময়ে শিশুদের ভয় কিছুটা কমে যায়। তবে সে সময়ের কিছু বিষয় ওদের মাথায় ঢুকে যায়—যেমন শব্দ। পরিচিত কিছু শব্দ যদি পরবর্তী সময়েও শিশুর কানে যায়, তাহলে সে ভীত হয়ে পড়তে পারে। এখানেও বয়স একটা বিষয়, মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ও সহকারী অধ্যাপক রাউফুন নাহার। যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে, তাদের পরিস্থিতি একরকম। আবার যারা ১০ বছরের ওপরে, তারা পরিস্থিতি সামলায় একভাবে। সন্তানের বয়সের ওপর ভিত্তি করে ধৈর্য ধরে মা–বাবার পদক্ষেপ নিতে হবে।