মানিকগঞ্জের নদীতীরবর্তী এক গ্রামে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমার শুটিং। সেখানে সারা দিন অপেক্ষায় ববিতা। অন্য শিল্পীরা শুটিংয়ে অংশগ্রহণ করলেও ববিতার ডাক আসে না। যখন ডাক আসে, তখন রাত দুইটা। কনকনে শীতের মধ্যে ওই রাতে আনন্দচিত্তেই সংলাপ দিতে দাঁড়িয়েছিলেন ববিতা। কারণ, ছবির পরিচালক আমজাদ হোসেন। যিনি পর্দায় গ্রামবাংলাকে সবার কাছে তুলে ধরেছেন। ছবিতে মাটি ও মানুষের কথা বলতেন তিনি। ছিলেন রাজনীতিসচেতন। বরেণ্য এই পরিচালকের আজ জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তাঁর ৮২ বছর পূর্ণ হতো। তাঁকে ঘিরে থাকত নানা আয়োজন। কিন্তু সেসব আজ অতীত।
১৯৪২ সালে জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমজাদ হোসেন। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। পরবর্তী জীবনে তিনি অসংখ্য গল্প, কবিতা ও উপন্যাস রচনা করেছেন। সিনেমায় তাঁর পথচলা শুরু হয় অভিনয় দিয়ে। ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরবর্তী সময়ে তিনি কালজয়ী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন। একসময় নিজেই পরিচালনায় নামেন এবং উপহার দেন একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্বকালীন যে সিনেমা স্বাধীনতা আন্দোলনে গণজোয়ার এনেছিল, সেই ‘জীবন থেকে নেয়া’র কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতাও ছিলেন আমজাদ হোসেন। গ্রামবাংলার ভালোবাসার ছবি হিসেবে যে ছবিটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত, সেই ‘সুজন সখী’রও কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা তিনি। পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে নির্মিত জনপ্রিয় ছবি ‘বেহুলা’র সংলাপও তাঁর লেখা। এ ছাড়া ‘ধারাপাত’, ‘আনোয়ারা’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’র মতো জনপ্রিয় ছবিগুলোর কাহিনিকার তিনি।