গতকাল রাস্তায় পুলিশের দেখা পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ চলেছে কোনো পুলিশ ছাড়া। বিশ্বের কোনো দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, জানা নেই। এ সময় জনগণ স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করে নিজেদের চোর, ডাকাত ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। ঢাকার প্রায় সব মহল্লাতেই সন্ধ্যার পর থেকে লাঠি-বাঁশি হাতে পাহারা চলছে।
নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর পুলিশপ্রধান বদল হয়েছে, বাহিনীতে কিছু রদবদল হয়েছে; কিন্তু পুলিশ ছিল কর্মবিরতিতে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন গত রোববার এ নিয়ে বেশ কঠোর কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি, তাঁদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে কেউ যোগ না দিলে ধরে নেওয়া হবে যে তাঁরা চাকরি করতে চান না।
একই দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা এসেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে পুলিশের লোগো ও ইউনিফর্ম বদল হবে। এসব উদ্যোগের ফলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছিল এবং পরে এর যে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তাতে এই বাহিনীর মনোবল বলে কিছু অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জটি তাই অনকে বড়।
গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা নানাভাবে যোগাযোগ করে তাঁদের অসহায়ত্ব ও বিপদের কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা তো কোনো দোষ করিনি, যাঁরা করেছেন, তাঁদের পাপে আমরা কেন শাস্তি পাব? তাঁদের পরিবারগুলোও ভয়ে আছে। এই ভয় এতটাই গভীর যে কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের লোকজন এমনও বলেছেন যে পুলিশের চাকরি আর করার দরকার নেই।
ভয় ছাড়া মর্যাদাবোধসম্পন্ন পুলিশ সদস্যের মধ্যেও অনেক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের খুলনা-বরিশাল বিভাগের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে এবং মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়ে তিনি আর পুলিশে কাজ করতে চান না।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে পুলিশ যেমন নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, তেমনি তারাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। যে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁদের ক্ষোভ হচ্ছে, পুলিশের যাঁরা অপকর্ম করেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে নিষ্ঠুরতার পরিকল্পনা করেছেন ও নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা তো নিরাপদেই আছেন। যাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন এবং এখনো ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তাঁরা সাধারণ পুলিশ।