প্রতিটি ঘরে একজন ন্যায়পরায়ণ ‘মা’ প্রয়োজন

যুগান্তর ফাতিমা পারভীন প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৩

আর দশজনের মতো আমি শহরে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠিনি। উপকূলীয় এলাকায় আমার জন্ম। আমার মা অতি শিক্ষিত ছিলেন না, নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন, আমার নানা ভাইয়ের কারণে। এরপর একাধিক সন্তান লালনপালনের মহান দায়িত্ব পালন করেন আমার মা। যদিও আমার মায়ের মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই বিয়ে হয়েছিল। তখনকার সময়ে পণ দিয়ে বিয়ে হতো। আমার মায়েরও পণে বিয়ে হয়। তখনকার সময়ে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের বিয়েগুলো এমন করে সম্পাদন হতো। মেয়েদের পণ (নগদ অর্থ কিংবা সম্পদ সম্পত্তি) দিয়ে বিয়ে করতে হতো।


আমার মায়ের জ্ঞান ও বিচক্ষণতার সঙ্গে যার পরিচয় হয়নি, তাকে বোঝাতে পারব না আমার মা সম্পর্কে। মেয়েশিশু হয়ে পৃথিবীতে আসার পর এক অন্যরকম উদাসীনতার মধ্যে বড় হতে হয়েছে আমাকে। আমার প্রতি নেতিবাচকতা, নিষ্ঠুরতা, শঠতা আর প্রতারণা আমাকে খুব বেশি আড়াল করেও রাখতে পারেনি। বরং এসবের আড়ালে আশ্রয়গ্রহণ করে মানুষ হতে চেষ্টা করেছি। চাইলেই জীবনের কিছু বাস্তবতা ও নিয়তির নির্মমতা উপেক্ষা করা যায় না। শিশুকাল থেকেই ডিপ্রেশনে ভুগতাম। বড় হয়ে আকাশে উড়ব এ চেতনায় উজ্জীবিত ছিলাম। উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না, চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা কিংবা গাড়ি ছিল না। জেলা, বিভাগ, রাজধানীতে যেতে ছোট একটি লঞ্চ ছিল। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এতটুকু বুঝতাম; কিন্তু যাওয়ার পথ জানতাম না, অর্থাৎ পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠীর একদম পেছনের সারির শেষ মানুষটি ছিলাম আমি।


এ কথা ভেবে আজ দুঃসময়গুলোর কথা মনে করে হতবাক হই। বিষখালি নদী ছিল আমাদের বাড়ির খুব কাছে, মনে পড়ে একাকী নদীর তীরে বসে কত জোয়ার-ভাটার জল দেখেছি, কত ঢেউ গুনেছি। ওই নদী আমাকে অনেক উদার হতে শিখিয়েছে চারপাশের কার্পণ্য ও কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। নদীতীরে ঢেউয়ে ভিজতাম, ভালো লাগত। জমে থাকা বালু দিয়ে হরেকরকম ঘরবাড়ি তৈরি করতাম। বালু দিয়ে তৈরি ঘরগুলো দেখতাম নীরবে। ভালোলাগা ছিল বেশ। নিজের হাতে তৈরি করা ঘরগুলো যখন নদীর ঢেউয়ের পানিতে ভেঙে ফেলত, তখন মন খারাপের দেশে চলে যেতাম। তখনই বুঝেছিলাম জীবনটাও ঠিক এমনই, গড়ে আবার ভাঙে; ভাঙে আর সহজে গড়ে ওঠে না। জীবন সত্যিই রহস্যাবৃত।


হয়তো আজও মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি, তাই বলে যে একদম অমানুষ হয়ে যায়নি, তা-ও খুব বুঝতে পারছি। দশ বছর একাধারে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায় ছিলাম। হাজারও নারীর ঘর বেঁধে দিয়েছি, শত শত মানুষকে মামলামুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এসবের পেছনে একজন মানুষের খুব সহযোগিতা ছিল, তিনি আমাকে শাসনে-ভাষণে রাখতেন ছোটবেলায়, তিনি হলেন আমার মা।


মেয়েশিশুদের কালেভাদ্রেই পরিবারে অধিকার আসে। আদর-যত্ন বলতে একালের মেয়েশিশু যা পায়, এরকম নয়। পরিবারে একমাত্র ভাইয়ের খুব কদর দেখে মনে মনে চাইতাম ঘুম থেকে উঠেই যেন ছেলেশিশু হয়ে যাই। প্রতিদিন সকালে নিজেকে খুব অসহায় লাগত। মনে হতো মা ভাইকে বেশি ভালোবাসেন। আমরা অনেক ভাইবোন ছিলাম, তাই সবার প্রতি খেয়াল রাখা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কথাটা সহজে বুঝতে চাইতাম না। সেদিনের মায়ের প্রতি সেই অভিমান থেকে আজ বেশ বুঝতে পারছি মায়ের কতখানি চেষ্টা ছিল আমাদের মানুষ করতে। আর তা বোঝার একমাত্র কারণ হলো আজ আমিও একজন ‘মা’।


চারপাশে নিষ্ঠুরতা দেখে যুদ্ধ করতে শিখেছিলাম। আমার ভালোলাগা, সবাইকে সমান ভালোবেসে বেঁচে থাকা, আর আমার সফলতা-যা-ই বলি না কেন, সবকিছুই যেন আমার পাশে বহমান বিষখালী নদীর চারপাশের অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশ এবং মায়ের কঠোর শাসন দেখেই শেখা।


আমাদের বাড়িতে একটা বড়সড় জবাবদিহিতা ছিল খাবার টেবিলে। আমরা বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। প্রতিবেশীরা একে অপরের সহায়ক ছিলেন। সন্ধ্যা হলেই নীড়ের পাখিরা ঘরে ফিরত। আমরাও ফিরতাম। মাগরিবের আজান মানে বাইরের জগৎ বন্ধ, নামাজ আদায় করে লেখাপড়া করতে হবে। ওই সময়ে ছেলে আর মেয়ে মস্ত এক বিভেদ ছিল। মার্বেল খেলা, রিং ঘোরানো, দাঁড়িয়াবান্ধা, সাইকেল চালানো এগুলোর অধিকারী ছেলেরা। আমার সেজো বোন আমাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে ছেলেদের সঙ্গে মার্বেল খেলত, সাইকেল চালাত। আমিও বঞ্চিত হইনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us