২৩ জুলাই ২০২৪ রাতে সীমিত আকারে চালু হলো ইন্টারনেট। আর কিছুক্ষণ পরপরই পেশাগত কাজের জন্য যুক্ত থাকা বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একের পর এক বার্তা আসতে শুরু করলো। অতি জরুরি কোনো কাজের তথ্য বিনিময়ের বার্তা নয়। সবাই সবার কুশল জানতে চাচ্ছেন। কয়েকদিনের রুদ্ধশ্বাস অবস্থা থেকে মুক্তির পর আপাত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন! কিন্তু কেন এমন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় গেল দেশ? কোথাও কোনো বড় ধরনের গলদ ছিল কি?
এক রিটের প্রেক্ষিতে ৫ জুন ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র বাতিল করলো হাইকোর্ট। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল হলো। আর তখন থেকে দানা বাঁধতে শুরু করলো সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন।
১ জুলাই ২০২৪ থেকে গণমাধ্যম এবং অন্যান্য সবার নজরে আসতে থাকলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এদিকে হাইকোর্টের রায়ের পর বিষয়টি আপিলে গেল, আপিল বিভাগ থেকে বলা হলো—পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে তারপর আপিল শুনানি করা হবে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের জন্য দাবি জানাতে থাকেন নির্বাহী বিভাগের কাছে। শুরু হয় বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি। এ সময় নিগৃহীত হন বেশকয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। তা নিয়ে বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক পর্যায়ে দেশজুড়ে দেওয়া হয় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। আর এই কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে নজিরবিহীন নাশকতার নামে একটি গোষ্ঠী। সে কথায় পরে আসছি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাদের হাতছাড়া হয়ে গেল কেন? কিংবা কীভাবে তা ভয়ংকর নাশকতায় রূপ নিলো? সুযোগ সন্ধানী দুর্বৃত্তরা কীভাবে ঢুকে গেল এই আন্দোলনে?
শুরুতে বলছিলাম, সরকার এই আন্দোলন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবে ছিল। কিন্তু পরে সরকারের কিছু দায়িত্বশীল মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন অতিকথন এই আন্দোলনে অন্যদের ঢোকার পথ তৈরি করে দিয়েছে। হয়তো এসব দুষ্কৃতকারীরা যেকোনো বাহানায় নাশকতা করতোই। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অতিমাত্রায় বাতুলতা না দেখালেও পারতেন।
শুধু অতিকথন নয়, ক্ষেত্র বিশেষে তাচ্ছিল্যও ছিল এই আন্দোলনের প্রতি। ছিল এমন কিছু মন্তব্য, যেগুলো কেউ কেউ উসকানি হিসেবে ব্যাখ্যার সুযোগ পেয়েছে। সরকার যেহেতু এই আন্দোলন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবে ছিল এবং তাদের ভাষ্য অনুযায়ী বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকায় নির্বাহী বিভাগের কিছু করার ছিল না—এই কথাগুলো কি ছাত্রদের ডেকে বুঝিয়ে বলা যেত না? তাহলে কি পরিস্থিতি এমন হতো? নিশ্চয় না।