কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গোটা দেশে অচলাবস্থা তৈরি হয়। ঢাকার সঙ্গে দেশের অনেক জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে আরও বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। অবশ্য সড়ক যোগাযোগ এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু এখনো ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই ঢাকায় আসার পথে নরসিংদীতে হামলার শিকার হলে একটি ট্রেনের তিনটি কোচ আগুনে পুড়ে যায়। এ ছাড়া সেদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হামলার শিকার হয় বেশ কয়েকটি ট্রেন। এতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি কোচ। সেদিন রাতেই সারা দেশে কারফিউ জারি করা হলে বন্ধ হয়ে যায় গোটা দেশের ট্রেন চলাচল। এতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন খাত।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কয়েক দিন ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটলেও পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটও চালু ছিল। এখন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় টিকিট বিক্রিতে বিঘ্ন ঘটায় যদি ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়, সেটি বলার সুযোগ নেই। আর নিরাপত্তার স্বার্থে এত দিন ট্রেন বন্ধ রাখার বিষয়টিও যুক্তিসংগত নয়। কারণ, দূরপাল্লার যাত্রীবাহী অনেক বাস ঠিকই ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে। পণ্য পরিবহনে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও চলাচল করছে। যদিও গত মঙ্গলবার থেকে কিছু জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তেল ও কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু দেশব্যাপী যাত্রী পরিবহন ও পুরোদমে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রেন যোগাযোগ বন্ধই আছে।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সময় বিক্রি হওয়া ট্রেনের টিকিটগুলোর টাকা ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে রেলওয়ে। এটির জন্য অবশ্যই সাধুবাদ। তবে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ জানিয়েছে, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলে প্রতিদিন অন্তত চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে গত ১০ দিনে কত টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এ ছাড়া যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি তো আছেই। দেশের জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভরসা এখনো ট্রেন। ট্রেনের নিয়মিত যাত্রীদের অনেকেই বেশি ভাড়া দিয়ে সড়কপথে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। এখানে এ প্রশ্নও উঠছে যে বাসমালিকদের সুযোগ করে দিতেই কি ট্রেন চলাচলের বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে?