কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাম্প্রতিক সহিংসতায় বিপর্যস্ত এই ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এখন নতুন করে আরেক ভীতিকর দৃশ্যের মুখোমুখি হচ্ছেন।
কখনো দিনের আলোয়, কখনো রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সারি সারি গাড়ি যাচ্ছে এসব এলাকায়। বাহিনীর সদস্যরা মুহূর্তেই ঘিরে ফেলছেন পুরো এলাকা, অবস্থান নিচ্ছেন বিভিন্ন পয়েন্টে।
আজ রোববার দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে বলা হয়েছে, অভিযান শুরুর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টার্গেট করা বাড়ির ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সড়কবাতি নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে অতিরিক্ত বাহিনী।
তারা বাড়ি বাড়ি ঢুকে শিক্ষার্থীসহ অন্য বাসিন্দাদের মোবাইল ফোন চেক করে দেখছেন, দুর্ব্যাবহার করছেন। মারধরের ঘটনাও ঘটছে। আন্দোলনের সঙ্গে ন্যুনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা পেলে কিংবা মোবাইলে এ ঘটনার কোনো ছবি বা ভিডিও পেলেই তাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। আবার অভিযুক্ত কাউকে না পাওয়া গেলে তার পরিবারের সদস্যদের তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি অভিযান চলার সময় ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার থেকে সার্চলাইটের আলো ফেলার মতো আতঙ্কের অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
প্রশ্ন হলো—এমন মৃত্যুময় ও বিপর্যস্ত সময় পার করতে না করতেই এই সাঁড়াশি অভিযানের প্রাসঙ্গিকতা ও আইনি ভিত্তি কতটুকু? মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকেও বা এটা কতটা প্রাসঙ্গিক?
বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটনের সঙ্গে।
এই অভিযান নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, 'এ অভিযান অবশ্যই বেআইনি। রাতের আঁধারে যাওয়াটা আরও বেআইনি। এটা স্বাধীন দেশ, গাজা উপত্যকা না। রাতে তো চোর যায়, ডাকাত যায়। এরা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) কেন যাবে?'
অভিযুক্তকে না পেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে পান্নার ভাষ্য, 'এটা ঘোরতর অন্যায়। ডাকাতির চেয়ে বড় অন্যায়।'
সবমিলিয়ে এ অভিযানের বিষয়ে এই আইনজীবীর মূল্যায়ন হলো, 'এটা নিন্দনীয়, বেআইনি ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সুশাসনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষের বিরুদ্ধে এই অভিযান। সন্ত্রাসীদের খোঁজার জন্য এতকিছু লাগে না। খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি করার তো দরকার নাই। জনগণকে যদি (সরকার) শত্রু মনে করে তাহলে এটা করতে পারে। আর জনগণকে যদি মিত্র মনে করে তাহলে জনগণই (সহিংসতাকারীদের) ধরিয়ে দেবে।'
'ব্লক রেইড'র বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, 'শিক্ষার্থীরা যারা দাবি-দাওয়া জানিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে যদি সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকে যে তারা কোনো সহিংসতা করেছে, কোনো নির্দিষ্ট মামলা থাকে তাদের বিরুদ্ধে, সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোনো আইনি বাধা নেই। কিন্তু আমরা যে অভিযোগ পাচ্ছি সেটা হচ্ছে—তুলে নিয়ে যাওয়া। পুলিশের তো তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। পুলিশ ছাড়া অন্য কারও গ্রেপ্তার করার এখতিয়ারও নেই। সেখানে অভিযোগ আছে অন্যান্য বাহিনীও (ব্লক রেইডে) গ্রেপ্তার করছে।'