শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে নিজের পড়াশোনার ব্যয় বহন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরলেও চাকরির কারণে বাড়ি যেতে পারেননি রায়হান। হল ছেড়ে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে এর পরও ঠিকভাবে অফিসে যেতে পারছেন না তিনি। গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।
রায়হান বলেন, ‘ক্লাস ও চাকরি সামলে আমার অন্য কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় না। চলমান কোটা আন্দোলনেও আমার সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি। কিন্তু এর পরও আমার আতঙ্কে দিন পার করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে আমি আমার যে বন্ধুর বাসায় ছিলাম সেই বাসায় রেইড দেয়া হয়েছে। এখন এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি।’
দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন এমন আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন। তাদের অভিযোগ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে গত কয়েক দিনে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের অনেকেই। যেকোনো সময় গ্রেফতার-হয়রানির ভয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না তারা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল বা আবাসন সুবিধার আওতায় থাকলে এখন এ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন পার করতে হতো না বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
গত কয়েকদিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শিক্ষার্থীদের আটক ও গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হারুন-অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন ধরে আবাসিক এলাকা এবং মেসগুলোয় পুলিশের ধরপাকড়ের ঘটনা শুনছি। বিশেষ করে শিক্ষার্থী শুনলে তাদের তল্লাশি করছে। কিছু ক্ষেত্রে গ্রেফতার ও হেফাজতে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। আমরা মেসে যারা আছি, তারা সবাই আতঙ্কে আছি। কখন পুলিশ আসে এ নিয়ে আমরা আতঙ্কে থাকি। অপরাধী না হয়েও শুধু শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে গ্রেফতার হতে পারি যেকোনো সময়।’