দেশের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করে আসছেন। জগতের বেশির ভাগ দেশেই অনগ্রসর মানুষদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোটার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেটা সহনীয় পর্যায়ে। সেখানে মেধারও মূল্যায়ন হয়। দেশের শিক্ষার্থীরা ঠিক সে জায়গাতেই আন্দোলন করছেন।
তাঁরা কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের কথা বলছেন। যাতে মেধার সঠিক প্রয়োগ তাঁরা করতে পারেন চাকরির ক্ষেত্রে। তাঁদের হয়তো মনে হয়েছে, চাকরির ক্ষেত্রে একধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে। যে বৈষম্যের কারণে তাঁরা হয়তো মেধার ভিত্তিতে চাকরিটা পাচ্ছেন না।
কোটা নিয়ে ২০১৮ সালে একবার আন্দোলন হয়েছিল। সে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনেও নিয়েছিল। এরপর আদালতের একটি সিদ্ধান্তের কারণে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব। যদিও সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরাও কোটা সংস্কারের পক্ষেই রয়েছেন। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে যে সরকার এই বিষয়ে আদৌ আন্তরিক কি না!
এ কারণে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতে পৃথিবীর যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে এমনটি আশা করাই যায়। কিন্তু আমরা কী দেখলাম?
আমরা দেখলাম, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলে উল্টো আন্দোলনকে দমন করার একধরনের হার্ডলাইনে গিয়েছে। সরকারের অনুগত ছাত্রবাহিনী ও পুলিশ মিলে ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো দেশবাসী লাইভে দেখল রংপুরে পুলিশের গুলিতে কীভাবে একজন ছাত্র মারা গেল। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। ফলে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আজ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশজুড়ে অনেক জায়গায় আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। নিহতের ঘটনার খবরও পাচ্ছি।
এর আগে ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ নামের যে ছেলেটিকে গুলি করে মারা হলো, তিনি হয়তো স্বাধীন দেশের পুলিশ বাহিনীকে বিশ্বাস করেছিলেন। তাই হয়তো বুক পেতে দাঁড়িয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সবার সামনে ছিলেন।
কিন্তু তাঁর বুকটা ঝাঁজরা করে দিল একটি স্বাধীন দেশের পুলিশ। গুলিগুলো যেন সাঈদের বুকে নয়, এসে লেগেছে দেশের লাখো, কোটি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের বুকে। এই লাখো, কোটি মানুষকে এখন কী জবাব দেবেন আপনারা? কেন সাঈদের বুক এভাবে ঝাঁজরা করা হলো? তাঁর অপরাধটা কী ছিল?
তিনি তো নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছিলেন। তিনি তো কোনো ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আন্দোলন করছিলেন না।