সংঘবদ্ধ অপরাধ বলতে এমন অপরাধ বোঝায় যেখানে একাধিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এবং সুসংগঠিতভাবে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই ধরনের অপরাধ সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও নেতৃত্ব থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলোতে দেখা যায় যে, একটি সুসংগঠিত চক্র পরিকল্পিতভাবে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রি করে। এই ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে সাধারণত অনেকেই জড়িত থাকে এবং এদের মধ্যে স্পষ্টভাবে কাজের বিভাজন থাকে।
বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ অপরাধের মধ্যে মানব পাচার, মাদক পাচার, অর্থ পাচার, চাঁদাবাজি এবং এমনকি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত অপরাধ অন্তর্ভুক্ত। এসব অপরাধ গোষ্ঠীগুলি প্রায়ই উচ্চতর স্তরের যোগাযোগ ও ক্ষমতা নিয়ে কাজ করে, যা তাদেরকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং আইন প্রয়োগকারীদের কাজ কঠিন করে তোলে। এই গোষ্ঠীগুলির কার্যক্রমের ফলে সমাজে একটি ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং আইনের শাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলি সমাজের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করেছে, যার মধ্যে অপরাধও অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মধ্যে সংঘবদ্ধ অপরাধ বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। সংঘবদ্ধ অপরাধের বৃদ্ধি শুধুমাত্র অপরাধমূলক পরিসরের পরিবর্তনের প্রতিফলন নয়, এটি এমন কিছু অন্তর্নিহিত সমস্যারও ইঙ্গিত দেয় যা দ্রুত সমাধান করা জরুরি।
বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক একটি রূপ হলো পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস। এই গর্হিত কাজ শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা নষ্ট করেনি, বরং শিক্ষাব্যবস্থার ন্যায্যতার উপর জনগণের আস্থা হ্রাস করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এতটাই ব্যাপক হয়ে উঠেছে যে এটি একটি সমান্তরাল অর্থনীতির সৃষ্টি করেছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়। এই অপরাধে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে, প্রায়শই শিক্ষাখাতের অভ্যন্তরীণ লোকদের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ফাঁসের পরিণতি সুদূরপ্রসারী, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, শিক্ষাগত মান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেখানে সংঘবদ্ধ অপরাধ নিজেদের উপস্থিতি প্রকাশ করেছে তা হলো মাদক পাচার। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ মাদক পাচারের একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে। মাদক পাচারের একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক রয়েছে যা আন্তর্জাতিক মাদক কার্টেল, স্থানীয় পরিবেশক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। এই বাণিজ্য শুধুমাত্র অপরাধকে পুষ্টি জোগায় না, এটি জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুতর চ্যালেঞ্জগুলিও উত্থাপন করে। মাদকের প্রবাহ তরুণদের মধ্যে আসক্তির হার বাড়িয়ে দিয়েছে, যা পরবর্তীকালে অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে যেমন অপরাধ, সহিংসতা এবং পরিবার ভেঙে যাওয়া।
মানব পাচারও বাংলাদেশের একটি গুরুতর সমস্যা। দেশটি মানব পাচারের উৎস, ট্রানজিট এবং গন্তব্যস্থল, যেখানে বাধ্যতামূলক শ্রম এবং যৌন পাচার অন্তর্ভুক্ত। সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রগুলি দুর্বল জনসংখ্যাকে শোষণ করে, প্রায়শই তাদের বিদেশে আকর্ষণীয় চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফাঁদে ফেলে। মানব পাচার নেটওয়ার্কগুলি জটিল, প্রায়শই বিভিন্ন দেশের একাধিক ব্যাক্তি ও গোষ্ঠী সাথে জড়িত থাকে, যা এটি মোকাবিলা করা কঠিন করে তোলে। ভুক্তভোগীদের উপর প্রভাব ধ্বংসাত্মক হয়, যা তাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার কেড়ে নেয়।