হিট বা তাপ হচ্ছে শক্তির একটি রূপ। তাপ নিয়ে গবেষণা আসলে বস্তুর অণু-পরমাণু নিয়ে গবেষণা। বস্তুর অণু-পরমাণু যত দ্রুত নড়াচড়া করে,বস্তুর তাপমাত্রাও তত বেশি হয়। পদার্থের অণুগুলো সবসময় কমবেশি গতিশীল থাকে। কোনো পদার্থের মোট তাপের পরিমাণ, এর মধ্যস্থিত অণুগুলোর মোট গতিশক্তির সমানুপাতিক। কোনো বস্তুতে তাপ দেওয়া হলে, এর অণুগুলোর ছোটাছুটি বৃদ্ধি পায়; ফলে এর গতিশক্তিও বেড়ে যায়। সুতরাং তাপ পদার্থের আণবিক গতির সাথে সম্পর্কিত এক প্রকার শক্তি, যা আমাদের শরীরে ঠাণ্ডা বা গরমের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
চীনাদের (এবং আমাদেরও, মানে বিদেশীদের) শরীরে ইতোমধ্যেই গরমের অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। শুনেছি, বাংলাদেশেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে এবং তাপমাত্রা সামনে আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বেইজিংয়েও আছে তেমনি ধরনের পূর্বাভাস। গত ৬ জুলাই বেইজিংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২১ জুলাই সর্বোচ্চ তামপাত্রা দাঁড়াতে পারে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অথচ, এ সময়কালটা, মানে ৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই, চীনে চিহ্নিত ‘ছোট গরম’ বা ‘সিয়াওশু’ নামে। ‘ছোট গরম’ চীনের একাদশ সৌরপদ। চীনা ভাষায় ‘সিয়াও’ মানে ‘ছোট’ এবং ‘শু’ মানে ‘গরম’।
চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুসারে বছরকে ভাগ করা হয় ২৪টি সৌরপদ বা সৌরপর্যায়ে (solar terms)-এ। প্রাচীন চীনে হলুদ নদীর অববাহিকায় এই ২৪ সৌরপদের উত্পত্তি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ২৪ সৌরপদ ‘চীনের পঞ্চম মহান আবিষ্কার’ (Fifth Great Invention of China) হিসেবে স্বীকৃত। ইউনেস্কোও একে মানবজাতির অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রতিটি সৌরপদের আছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। চীনে হাজার হাজার বছর আগে এই সৌরপদ-ব্যবস্থার উত্পত্তি। প্রাচীনকাল থেকেই চীনারা সৌরপদ অনুসারে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে কৃষিকাজ আঞ্জাম দিয়ে আসছে।
বছরের কোন সৌরপদে আবহাওয়া কেমন থাকবে—তা নামগুলো দেখলেই বোঝা যায়: লি ছুন (বসন্তের শুরু), ইয়ুশুই (বৃষ্টির পানি), চিংচ্য (পোকামাকড়ের জাগরণ), ছুনফেন (বসন্ত বিষুব), ছিংমিং (তাজা সবুজ), কুইয়ু (শস্য-বৃষ্টি), লিসিয়া (গ্রীষ্মের শুরু), সিয়াওমান (কম পূর্ণতা), মাংচুং (ফসল বোনার সময়), সিয়াচি (উত্তরায়ন), সিয়াওশু (ছোট গরম), তাশু (বড় গরম), লিছিয়ু (শরতের শুরু), ছুশু (গরমের শেষ), পাইলু (শুভ্র শিশির), ছিউফ্যন (শারদীয় বিষুব), হানলু (ঠাণ্ডা শিশির), শুয়াংচিয়াং (প্রথম হিমেল হাওয়া), লিতুং (শীতের শুরু), সিয়াওসুয়ে (ছোট তুষার), তাসুয়ে (বড় তুষার), তুংচি (দক্ষিণায়ন), সিয়াওহান (ছোট শীত), তাহান (বড় শীত)।
চান্দ্রপঞ্জিকার সৌরপদ অনুসারে চীনারা তাদের খাওয়া-দাওয়ায়ও পরিবর্তন আনে, পরিবর্তন আনে পোশাক-আশাকে। যেমনটি আগেই বলেছি, এখন চলছে চীনের একাদশ সৌরপদ ‘ছোট গরম’। এ সৌরপদের হাত ধরে চীনে গরম আসে। সেই গরম দিন দিন বাড়তে থাকে। অন্তত তেমনটাই হবার কথা। কিন্তু বাস্তবে ‘ছোট গরম’-এ ‘বড় গরম’-এর আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ, ‘বড় গরম’ তথা দ্বাদশ সৌরপদ আসবে ২২ জুলাই!
সিয়াওশু শুধু গরম নিয়ে আসে না, নিয়ে আসে ঝড়, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টিও। বেইজিংয়ে আমি যে এলাকায় থাকি, সেখানে শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে শুনিনি বা দেখিনি। বজ্রপাতের শব্দও এখনও শুনিনি। তবে, প্রচণ্ড বাতাসসহ বৃষ্টি হয়েছে একাধিক বার। প্রায় প্রতিরাতেই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। আর এ কারণে, রাতের বেলায় তাপমাত্রা খানিকটা কমে যায়। ৬ জুলাই রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর, ২১ জুলাই রাতের তাপমাত্রা কমে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস বলছে।