আজ পবিত্র মহররম মাসের ১০ তারিখ। আশুরা বলতে মহররম মাসের দশম দিনকে বোঝানো হয়। দিনটি বড়ই ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহররম আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি)
এ তারিখটি মুসলিম বিশ্বের কাছে গভীর শোকের দিন। এই দিনে বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেন। সেদিন প্রকৃত ইসলাম ও সত্যের জন্য হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে মাথানত না করে লড়াই করে শাহাদতবরণ করেছিলেন।
হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু সেদিন ন্যায় ও সত্যের জন্য চরম আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনুকরণীয়। শিয়ারা বর্তমানে হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদতের শোকে যে মাতম করে তা অনেকটা বাড়াবাড়ি করে থাকে।
হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ত্যাগের কথা স্মরণ করে তার আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করা। রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে অপরকে কষ্ট দিয়ে শোক প্রকাশের কোন শিক্ষা ইসলামে নেই। এছাড়া শহিদে কারবালা হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে গেছেন- ‘আমি শহীদ হলে তোমরা আমার জন্য উহ্! আহ্! করো না, আঁচল ছিঁড়ো না, বরং ধৈর্য ধারণ করে থাকবে।’
হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতে রাশেদার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নিজ দেহের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত দান করে গেছেন, যুগ যুগ ধরে তাঁর এই ত্যাগ মুসলিম উম্মাহকে খিলাফতে রাশেদার অনুরূপ আল্লাহ মনোনিত খলিফা ও ঐশী ইমামত-এর ছত্র-ছায়ায় জীবন অতিবাহিত করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদতের ঘটনার জন্য প্রত্যেক মুসলমানই সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করে থাকে আর শিয়ারা প্রত্যেক বছর মহররম মাসে নিজস্ব রীতি অনুসারে সেই দুঃখ এবং বেদনায় হা-হুতাশ করে থাকে। যদিও আমাদের দৃষ্টিতে তারা এক্ষেত্রে খুবই বাড়াবাড়ি করে। কারবালায় হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু, তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ এবং কয়েকজন সাথী সঙ্গীকে বড় নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এ ঘটনা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদতের ঘটনারই একটি ধারাবাহিকতা।
হজরত ইমাম হাসান ও হোসাইন সম্পর্কে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের যুবকদের সরদার তারা। তাদের উভয়ের জন্য রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার কাছে এই দোয়া করতেন যে, হে আল্লাহ্! আমি তাদের ভালবাসি, তুমিও তাদেরকে ভালবাস। অতএব, যারা রাসুলুল্লাহর দোয়ার কল্যাণ এতটা লাভ করেছেন আর একই সাথে যারা শাহাদতের পদমর্যাদাও লাভ করেন এমন মানুষ অবশ্যই আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি অনুসারে জান্নাতে মহান জীবিকা লাভ করবেন এবং তাদের হত্যাকারী অবশ্যই খোদার গযব এবং ক্রোধের শিকার হবে।
আজ থেকে চৌদ্দশ বছর পূর্বে এই মহররম মাসে দশ তারিখে নিষ্ঠুর পাষাণরা রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই প্রিয়কে শহীদ করে। যে শাহাদতের ঘটনা শুনে গা শিউরে উঠে। এই পাষাণরা এক মুহূর্তের জন্যও চিন্তা করল না যে কাকে আমরা খড়গাঘাত করতে যাচ্ছি।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে শিক্ষা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন তা কিভাবে পদদলিত হয়েছে হজরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদতের ঘটনার মাধ্যমে তা ফুটে উঠেছে। হজরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর সৈন্য বাহিনীর ওপর যখন শত্রু নিয়ন্ত্রণ পায় তখন তিনি ঘোড়াকে সমুদ্রমুখী করে অগ্রসর হওয়ার জন্য ইচ্ছা করেন তারপরও তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং তার প্রতি তীর ছুঁড়া এবং সেই তীর হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর চীবুকের নিচে লাগে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি শাহাদতের পূর্বে তাকে এই কথাই বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম, আমার পর আল্লাহর এমন কোন বান্দাকে তোমরা হত্যা করবে না যার হত্যার কারণে আল্লাহ তোমাদের প্রতি আরো বেশী অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন।
আমি আশা করি আল্লাহতায়ালা তোমাদের লাঞ্ছিত করবেন আর আমাকে সম্মানিত করবেন। এরপর আমার হত্যার প্রতিশোধ এমন ভাবে নেবেন যে, যা তোমরা ভাবতেও পার না। আল্লাহর কসম, আমাকে যদি তোমরা হত্যা কর তাহলে আল্লাহতায়ালা তোমাদের মাঝে যুদ্ধ সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের রক্ত ঝরবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বেদনাদায়ক শাস্তিকে আল্লাহ বহুগুণে বৃদ্ধি না করেন তিনি বিরত হবেন না।