অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা– সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে স্থগিত করেছেন এক মাসের জন্য। কিন্তু এতে করে প্রত্যাশা মতো কোটা বিরোধী আন্দোলন এর ফলে সৃষ্ট জন ভোগান্তি কমলো না। কোটা বিরোধীরা নির্বাহী বিভাগ এ সংক্রান্ত ঘোষণা দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সড়ক অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কয়েক বছর ধরে সে অনুযায়ী কোটাবিহীন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি রিটের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাইকোর্ট কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়।
যেহেতু আদালতের মাধ্যমে ফিরেছিল কোটা, আবার আদালতই স্থগিত করেছে তাই আন্দোলনকারীদের এটা মানা উচিৎ। কোটা বা সংরক্ষণ প্রথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউ জিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকায় ‘পজিটিভ ডিস্ক্রিমিনেশন” নামে কোটা আছে। ফ্রান্সে সরকারি চাকরিতে বড় অংকের নারী কোটা আছে। ব্রাজিলে আদিবাসীদের জন্য চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে কোটা প্রথা বজায় আছে।
এটাই স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশের ভাবনাটা পশ্চিমা সমাজের চাইতে ভিন্ন হবে। বহু বছর ধরেই পিছিয়ে পড়া মানুষদের সামাজিক ন্যায় ও আর্থিক মানোন্নয়নকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯-এর ৩ (ক) অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোকে অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য শতকরা পাঁচ ভাগ কোটা সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়।
এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে উপজাতি কোটা রাখা হয়। কোটাব্যবস্থা পেয়ে তাদের জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক সূচকে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে। তেমনিভাবে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির জন্যও কোটা আছে এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কেউ আপত্তি করছে না। ক্ষেত্র বিশেষে নারীদের জন্যও কোটা ব্যবস্থা বড় অবদান রেখেছে।
এই সংরক্ষণ প্রথার সুফল হিসাবে স্বাধীন দেশে সমাজে অন্যদের থেকে তুলনামূলক ভাবে আর্থিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষরা স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কোটা তাই সমাজে ন্যায্যতা বজায় রাখতে অবদান রাখছে। প্রশ্ন হতে পারে কোটা প্রথা কতটুকু এবং কীভাবে থাকবে? এ বিষয়ে বড় ঐক্যমত প্রয়োজন। যারা কোটা বাতিল চান তারা বুঝতে পারছেন না যে, শ্রেণি, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গীয় অসমতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই দেশে কোটা বাতিল সমাজের অসমতা এবং বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।