দুর্নীতি বাংলাদেশে গভীর ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এই বিপদ মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রকৃতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।
ব্যাপক সমস্যার দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো সৈয়দ আবেদ আলীর গল্প যে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার প্রাক্তন গাড়িচালক হয়ে অবর্ণনীয়ভাবে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এই লেখায় বাংলাদেশের দুর্নীতির মাত্রা, তা মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টা এবং আবেদ আলীর গল্পের প্রভাব অনুসন্ধান করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়; এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিকাঠামো এবং এর বাইরেও ব্যাপক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাগুলো বারবার ব্যর্থ হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্নীতির জন্য। এই অবৈধ কার্যকলাপগুলো সরকারের লক্ষ্য অর্জনে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করে চলেছে, যা শেষ পর্যন্ত জাতির ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলছে।
দুর্নীতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। দুদকের উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের তদন্ত ও বিচার করা, যার লক্ষ্য আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে এই ধরনের কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই পদক্ষেপগুলোর প্রতি সরকারের সমর্থন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরেছে।
তবে, দুদকের প্রচেষ্টার কার্যকারিতা প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যদিও কিছু অগ্রগতি হয়েছে, দুর্নীতির গভীর প্রকৃতির জন্য আরও ব্যাপক এবং টেকসই পদ্ধতির প্রয়োজন। দুদকের সাফল্য নির্ভর করে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সব স্তরে দুর্নীতি মোকাবিলায় ক্ষমতার ওপর।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসির) প্রাক্তন চেয়ারম্যানের প্রাক্তন গাড়িচালক আবেদ আলীর গল্পটি ইতিমধ্যেই দেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, আবেদ আলী একজন গাড়িচালক হয়ে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। ফলে, সবার মধ্যে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো—একজন গাড়িচালক আবেদ আলী কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন?
এর উত্তর দুর্নীতির জটিল জালের মধ্যে নিহিত রয়েছে যা ব্যক্তিগত পদক্ষেপের বাইরে সরকারি বিভাগগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত সমস্যা পর্যন্ত বিস্তৃত। আবেদ আলীর বিষয়টি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের অস্তিত্বকে তুলে ধরেছে যারা অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সুরক্ষা দেয়। এই ‘বড় কর্তারা’ দুর্নীতিকে সহজতর করে, এটি নিশ্চিত করে যে আবেদ আলীর মতো নিম্নস্তরের লোকেরা দায়মুক্তির সাথে কাজ করতে পারে।
আবেদ আলীর কাহিনি নিয়ে গণমাধ্যমের সম্প্রচার জনগণের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। তবে, পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ব্যতীত দুর্নীতিতে তার সংযোগের সম্পূর্ণ ব্যাপ্তি এবং যে প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে তিনি তার সম্পদ অর্জন করেছিলেন তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
এই ধরনের উদাহরণ দুর্নীতির নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে ফেলার এবং সব পক্ষকে জবাবদিহি করার জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার একটি স্পষ্ট অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু, এই সাফল্যগুলো প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ হয় ক্রমাগত দুর্নীতি এবং শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে। দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাবকে গুরুত্ব দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়গুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।