অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার তেমন কোনো আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেনি। এর একটা বড় কারণ হলো ডলার ও টাকার দরে অনেক বছর ধরেই তেমন কোনো ওঠানামা ছিল না।
বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার দর পড়তে থাকে। এই পরিক্রমায় গত মে মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার একটি বড় মূল্য পতন হয়। এ কারণে জনমনে বেশ শঙ্কার সৃষ্টি হয়। এটি অর্থনীতি খুব খারাপ দিকে চলে যাওয়ার আলামত কি না, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে যায়। এই ভাবনার পেছনে আপাতদৃষ্টে কিছু যৌক্তিক কারণ থাকলেও আসলে এ ভয়টি বেশ অমূলক।
প্রথমেই কিছু ভুল ধারণা সংশোধন করা দরকার। সেটা হলো আইএমএফের চাপে সরকার এ কাজটা করেছে। আসলে এর কোনো প্রয়োজন ছিল না এবং এই অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেশের জন্য ক্ষতিকর।
এর প্রথম ভাগটা সঠিক যে আইএমএফের চাপে কাজটা হয়েছে। কিন্তু এটি একটি অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর পদক্ষেপ—এটি অবশ্যই ভুল। আমার এই মতামত অবশ্য অর্থনীতিবিদ ব্যতীত অনেককেই অবাক করতে পারে। কারণ, সোজা কথায় টাকার অবমূল্যায়ন শুনতেই খারাপ লাগে।
এক ডলার কিনতে আগের চেয়ে বেশি টাকা লাগছে—বিষয়টি বেশ গায়ে লাগারই কথা। এ ছাড়া অর্থনৈতিক দিক থেকেও কিছু খারাপ প্রতিক্রিয়া আছে, সেটা অনস্বীকার্য।
তবে আপাতদৃষ্টে যেটা যে রকম দেখা যায়, সেটা অর্থনীতিতে অনেক সময় অন্য রকম হয়। এই টাকার অবমূল্যায়ন সে রকম একটি বিষয়। সেটি বোঝার জন্য ডলারের বিনিময়মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হয়, তা নিয়ে একটু আলোচনা দরকার।
ডলারের বিনিময়মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হবে, তার জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি বর্তমানে নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে সত্তরের দশক পর্যন্ত পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ একটি নির্দিষ্ট ডলার বিনিময় হার নির্ধারণ করে সেই হার ধরে রাখার চেষ্টা করত। সত্তরের দশকে অর্থনৈতিক সংকটে এটি ভেঙে পড়ে।
তখন অনেক দেশ বাজার দ্বারা নির্ধারিত বিনিময়মূল্যের হাতে নিজের দেশের মুদ্রাকে ছেড়ে দেয়। এরপর আবার কিছু দেশ একটি নির্দিষ্ট স্থির বিনিময় হারে ফিরে যায়।