বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এ লেখাটি লিখেছি, কারণ সমস্যাটি পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের। এখানে পরীক্ষায় ছাঁকা প্রশ্ন। আর তার ছাঁকা উত্তর বহুবার ফিরে ফিরে আসে পরীক্ষায়, সেই সঙ্গে আজকাল এমসিপি বা একাধিক বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া উত্তর নম্বর পাওয়া আরও সহজ করে দিয়েছে। ফলে প্রশ্ন হাতে পেলে আমরা হাতে যেন বেহেশ্ত পাই। সেই প্রশ্ন যদি পরীক্ষার আগেই ঘরে পৌঁছে দেয় কেউ, এর চেয়ে স্বর্গীয় ব্যবস্থা আর কী হতে পারে? ভারতে এ রকম একটি ব্যবস্থা কায়েম করার চেষ্টা করছে কোনো কোনো পক্ষ। আশা করি বাংলাদেশে এই ব্যাধি এখনো মারাত্মক হয়ে ওঠেনি। প্রতিবেশীর হোক, যারই হোক, কুশিক্ষা তো বাতাসের গতিতে ছড়ায়।
কদিন হলো, পরীক্ষা-সংক্রান্ত দুটি কেলেঙ্কারি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার নড়বড়ে ভিত আরও বেশি করে নাড়িয়ে দিয়েছে। একটি ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণের ‘নিট’ (NEET, National Eligibility cum Entrance Test)। এটি দেশের নানা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতার পরীক্ষা। আরেকটি অধ্যাপক ও গবেষণার কাজে যোগ্যতা প্রমাণের ‘নেট’ (NET, National Eligibility Test) পরীক্ষা। দুটিই নেয় NTA (National Testing Agency) বলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নবপ্রতিষ্ঠিত (২০১৯) একটি সংস্থা, যা এ ধরনের আরও পরীক্ষা নিয়ে থাকে। আমরা দেখছি, গত কয়েক বছর ধরে এসব কেলেঙ্কারির সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, নারী ধর্ষণ বা নানা অজুহাতে অন্য ধর্মীয়দের হত্যা বা দলিত নির্যাতনের মতোই। গত পাঁচ বছরে নাকি, একটি দৈনিকের হিসাবে, এ রকম মোট তেরোটি ঘটনা ঘটেছে, কোনো বছরে, স্বাভাবিকভাবেই একাধিক। তার মধ্যে সৈন্যবাহিনীতে নিয়োগের পরীক্ষা থেকে ইত্যাদিও আছে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষার একটা অংশে নিজেদের শাসন নিয়ন্ত্রণের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান নেটের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন, কিন্তু এ দুষ্কর্ম চিরকালের জন্য বন্ধ হবে এমন আশ্বাস জাতিকে দিতে পারেননি।