সম্প্রতি দেশে খুব জোরালোভাবে আলোচনায় দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দুর্নীতি সংক্রান্ত নানা খবর প্রকাশ ও প্রচার করা হচ্ছে। আর জনমনে কেমন যেন উৎফুল্ল ভাব কাজ করছে—দুর্নীতি বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলছে মনে হয়! কিন্তু আদতে কি তাই?
এই দফায় প্রথম নাড়াটা দিয়েছে গণমাধ্যম। একটি পত্রিকা সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের পাহাড়সম অবৈধ সম্পদ থাকার খবর প্রকাশ করল। এরপর আরও অনেক গণমাধ্যম তা নিয়ে লাগাতার খবর প্রকাশ করল। এক পর্যায়ে নড়েচড়ে বসে দুদক। শুরু হয় অনুসন্ধান।
দুদক কর্মকর্তারা নানা রকম বক্তব্য গণমাধ্যমে দিতে থাকেন। বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী সন্তানকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠালেন। কিন্তু বেনজীরকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। কেউ বলছেন দেশে আছেন, কেউ বলছেন বিদেশে আছেন। কোথায় আছেন তা আর পরিষ্কার হলো না।
গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, বেনজীর আহমেদ ১৪শ বিঘার বেশি জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক কিনে নিয়েছেন। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অনেক জমিজমা আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে।
বেশকিছু সম্পত্তির তদারকির জন্য আদালতের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কথা হলো, যাদের সম্পদ বেনজীর আহমেদ জোর করে দখল করেছেন কিংবা যাদের কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন তারা কি সেইসব সম্পদ ফেরত পাবেন? বা যারা তার লোভ এবং ক্ষমতার দাপটের কাছে জিম্মি হয়ে সব হারিয়েছেন, তাদের জন্য রাষ্ট্র কি প্রতিকার দেবে? কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা যে তারা পাচার করেছেন, তা কি ফেরত আসবে দেশে? এই দেশে একমাত্র আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ছাড়া আর কারও টাকা ফেরত আসার নজির এখন পর্যন্ত নেই।
এদিকে ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদের আগে বারো লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে ভাইরাল হলেন রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। মতিউর রহমান মুশফিকুর রহমান ইফাতকে নিজের ছেলে বলে অস্বীকার করলেন! তা নিয়ে একের পর এক রিপোর্ট হতে থাকলো গণমাধ্যমে। ব্যস! এক পর্যায়ে নড়েচড়ে বসলো দুদক। অনুসন্ধান শুরু হলো তার অবৈধ সম্পদ অর্জন বিষয়ে।
এরমধ্যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা বলেছে দুদক। তার নাকি সাতশ ব্যাংক একাউন্টের খোঁজ মিলেছে এখন পর্যন্ত। এই তো ঘটনা! কিন্তু সার্বিক প্রেক্ষাপটে একটা জোয়ার উঠেছে দেখে উঠে পড়ে লেগেছে দুদক কিংবা সরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেশ কয়েকজন সাবেক আমলার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। সেইসব নিয়ে এখন পর্যন্ত দুদকের কোনো হেলদোল নেই! গণমাধ্যমের খবর পুলিশের উচ্চপদস্থ ২০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের হাতে রয়েছে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রভাব খাটানো, পেশিশক্তি প্রদর্শন, মানি লন্ডারিং, দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এগুলোর খুব বেশি অগ্রগতি নেই। অনুসন্ধান চলছে, ঢিমেতালে।